০৩:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫

ডাকসু, জাকসু মাস্টারপ্ল্যানের অংশ কিনা, প্রশ্ন রিজভীর

গণমানুষের ভাবনা রিপোর্ট

ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে একটি ছাত্র সংগঠনের বিজয় ‘কোনও মাস্টারপ্ল্যানের অংশ কিনা’ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রুহুল কবির রিজভী।

রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) এক আলোচনা সভায় সদ্য সমাপ্ত ঢাকা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই প্রশ্ন তোলেন। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৮তম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল হয়।রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘যেদিন ভোট সেদিন ভোটার তৈরি করা হচ্ছে এবং হাতে লিখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে… এগুলো কী অনিয়ম নয়? আপনি জালিয়াতি না বললেও এটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সামগ্রিক ম্যাকানিজম, যাতে একটি ছাত্র সংগঠনকে বিজয়ী করা যায়। সেখানে ব্যালট পেপার ছাপানো হবে, ব্যালট বই ছাপানো হবে, সেটা একটি ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে কেন? সেখানকার শিক্ষকরা পর্যন্ত নির্বাচন বর্জন করেছেন অনিয়ম দেখে।’তিনি বলেন, ‘ঠিক একই কাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে। আপনি ব্যালট পেপার ছাপিয়েছেন প্রাইভেট একটি প্রেস থেকে… এটা তো করতে পারেন না। ব্যালট পেপার ছাপানো হবে সেটা সরকারি কোনও প্রেস…বিজি প্রেস হতে পারে অথবা অন্য কোনও প্রেস থেকে। সেই ব্যালট পেপারে কোনও নম্বর নেই… এটা রহস্যজনক। ব্যালট পেপার ছাপানো হচ্ছে প্রাইভেট কোনও প্রেস থেকে, যেটার মালিকের সঙ্গে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক আছে, যা প্রমাণিত হয়েছে। তাহলে রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব মিলিয়ে কোনও একটা গভীর নীলনকশা তৈরি হচ্ছে কিনা, টার্গেট করে যেখানে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে… ‘আমরা আওয়ামী লীগকে তাড়িয়েছি, এখন তাদের (বিএনপি) ঘায়েল করতে হবে…’, এই একটা কোনও মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে কিনা সেটা আজ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে।’

রিজভী বলেন, ‘আমরা যেটা দেখছি, সেটা গণতন্ত্রের জন্যও বিপজ্জনক, গণতন্ত্রের চর্চার জন্যও বিপজ্জনক এবং মানুষের যে ধর্মীয় চেতনা এটার জন্যও বিপজ্জনক। এখানে মানুষ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, আবার এসে টেলিভিশনে নাটকও দেখেন, গানও শোনেন। কিন্তু আপনি যখন একপাক্ষিক করে ফেলবেন সমাজ, একটা নতুন ধরনের ফ্যাসিবাদের রূপ নেবে।’

তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত পর্যায় হলো উগ্র সাম্প্রদায়িকতা এবং উগ্র ধর্মীয় রাজনীতি এবং এটা আসলে পরে আরও সর্বনাশ। মেয়েরা কীভাবে চলবে সে তো মেয়েদের অধিকার। এটা কেড়ে নেওয়া হলে, মেয়েদের যে অধিকার সেটা হরণ করা হলে ভয়ংকর পরিণতি হবে এবং দেখা গেছে উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতি যেসব দেশে চলছে সেসব দেশে মেয়েদের কোনও অধিকার নেই।’

ডাকসু-জাকসুতে ভোট ইঞ্জিনিয়ারিং

রিজভী বলেন, ‘কেউ কেউ মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের ফলাফল হয়েছে। গণতন্ত্রে সাধারণ ছাত্র সমাজের ইচ্ছার প্রতিফলন তার বিরুদ্ধাচরণ করি না। কিন্তু এই ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য যদি কোনও ইঞ্জিনিয়ারিং হয়, এটা কিন্তু ধরা পড়বে। যেটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে।’তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন এটা উৎসবের মতো হয়। যে উৎসবে পূর্ববর্তী ছাত্র সংসদের ভিপি-জিএস ছিলেন তারা কথা বলেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, তিনি কোড অব কন্ডাক্ট তৈরি করছেন, বাইরের কেউ আসতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয় বিচ্ছিন্ন কোনও দেশ নাকি? ভ্যাটিকেন সিটি তো নয়… দেশের মধ্যে দেশ তো না। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর একটা উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সরকারের কিছু মানুষের সঙ্গে যোগসূত্র হয়ে একটা একচেটিয়া নির্বাচন করার প্রচেষ্টা করেছেন; যাতে একচেটিয়া একটা ফলাফল তৈরি করা যায়।’

তাদের আসল রূপ

রিজভী বলেন, ‘তাদের ভান্ডামি দেখেন–যারা ছাত্রলীগের নেতা সেজে ক্যাম্পাসে অবস্থান করেছে, হেলমেট পরে ছাত্রদলসহ অন্যান্য দলের কর্মীদের আঘাত করেছে, আবার শেখ হাসিনার পতনের পর আসল রূপ নিয়ে ছাত্র শিবির হয়ে গেলেন…। এই যে ঘটনা, এটা জনগণের কাছে উন্মোচিত হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত গোপনে তারা প্রচার চালায় যে বিএনপি চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত। বিএনপি বৃহত্তর দল… কেউ না কেউ দুষ্টু চক্র থাকতে পারে। এই চক্র নানা ধরনের কাজ করতে পারে। দল যদি এটা নীরবে সহ্য করে তাহলে সেটা দলের দোষ। আর দল যদি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় তাহলে দল সঠিক পথে আছে। দুর্ভাগ্য, কিছু গণমাধ্যমে তাদের সঙ্গে মিলে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যায় সব সময়।’

তাদের উত্থানে আমি আতঙ্কিত

রিজভী বলেন, ‘যে ছাত্র সংগঠনটি সম্পর্কে বলা হচ্ছে তাদের খুব জনপ্রিয়তা কিন্তু আমি আতঙ্কিত বোধ করি। তাদের রাজনৈতিক দলটি (জামায়াত) কখনোই এ দেশের যে পলিটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট– প্রথমে পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে। তাহলে তারা ব্রিটিশকে পছন্দ করেন, উপনিবেশবাদকেই পছন্দ করেন। ঠিক একাত্তর সালেও তারা সেই ভূমিকা রাখলো। আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করলো। আমরা যখন দেখছি, এই অঞ্চলের মানুষ পশ্চিমাদের দ্বারা বঞ্চিত সমস্ত দিক থেকে, শিক্ষা-দীক্ষা, অর্থনীতিসহ সব দিক থেকে, তখন এটা মুক্তিযুদ্ধে টার্ন নিলো, জামায়াত তখন বিরোধিতা করলো। তারপর জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় তারা রাজনীতি করার সুযোগ পেলো। তারপরে যত ঘটনা হয়েছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করেছে জামায়াত।’তিনি বলেন, ‘১৯৮৬ সালে স্বৈরাচারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াত গেলো, ১৯৯৫-৯৬ সালে শেখ হাসিনার সঙ্গে তারা বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করলো, এরপরে যেই ২৪-এর আন্দোলন শেষ হলো, তারা বললো আমরা ভারতের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলবো আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দেবো। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার-টাকা চুরি করলো আওয়ামী লীগের নেতারা, ছেলে-মেয়ে-ভাগ্নে-ভাগ্নিকে সরকারি প্লট দিলো, কোটি কোটি টাকা পাচার হলো বিদেশে, লন্ডনে হাসিনার ভাগ্নি, সেও একটা ফ্ল্যাট পায়, তাদের টাকার কোনও হিসাব নাই, চট্টগ্রামের এক আওয়ামী লীগের নেতা কিনা লন্ডনেই ১৩০টা বাড়ি পাওয়া গেছে– গোটা দেশের জনগণের টাকা লুণ্ঠন করে একটা জাতিকে ধ্বংস করার যে পরিকল্পনা নিয়েছিল শেখ হাসিনা, তাকে ক্ষমা করে দেবে? বিভিন্ন জায়গায় তাদের এই লুটপাট, ভয়ংকর অত্যাচার-অবিচার, যেখানে তাদের অপরাধের বিচার হওয়া জরুরি এবং কিছু বিচার চলছে, কত আন্দোলনকারীরা, বিধবারা, মা-স্বজনহারা আর্তনাদ করছেন, এরপরে তারা বলে দিলেন ক্ষমা করে দেবো।’

আওয়ামী লীগারদের ঠাঁই হচ্ছে জামায়াতে

রিজভী বলেন, ‘এখন আমরা খবর পাই, বিভিন্ন এলাকায় ওই সব নিপীড়নকারী, নির্যাতনকারী আওয়ামী লীগারদের জামায়াতের সদস্য করা হচ্ছে। এর প্রমাণ আছে, ডকুমেন্ট আছে– সামাজিক মাধ্যমে সব প্রকাশ হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি ইঞ্জিনিয়ার ভাইদের বলি, আপনাদের মধ্যে ফ্যাসিবাদের দোসররা, যাদের বিভিন্ন জায়গায় ছবি আছে, অতীত কর্মকাণ্ড আছে, তারা যেন আপনাদের এই সংগঠনে ঢুকতে না পারে এটা আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে।’

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিইএব) আহ্বায়ক মো. হানিফ ও সদস্য সচিব কাজী শাখাওয়াত হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির সাইফুল আলম নিরবসহ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা বক্তব্য রাখেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

আপডেট: ০৩:৪৩:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
১৮

ডাকসু, জাকসু মাস্টারপ্ল্যানের অংশ কিনা, প্রশ্ন রিজভীর

আপডেট: ০৩:৪৩:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে একটি ছাত্র সংগঠনের বিজয় ‘কোনও মাস্টারপ্ল্যানের অংশ কিনা’ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রুহুল কবির রিজভী।

রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) এক আলোচনা সভায় সদ্য সমাপ্ত ঢাকা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই প্রশ্ন তোলেন। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৮তম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল হয়।রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘যেদিন ভোট সেদিন ভোটার তৈরি করা হচ্ছে এবং হাতে লিখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে… এগুলো কী অনিয়ম নয়? আপনি জালিয়াতি না বললেও এটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সামগ্রিক ম্যাকানিজম, যাতে একটি ছাত্র সংগঠনকে বিজয়ী করা যায়। সেখানে ব্যালট পেপার ছাপানো হবে, ব্যালট বই ছাপানো হবে, সেটা একটি ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে কেন? সেখানকার শিক্ষকরা পর্যন্ত নির্বাচন বর্জন করেছেন অনিয়ম দেখে।’তিনি বলেন, ‘ঠিক একই কাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে। আপনি ব্যালট পেপার ছাপিয়েছেন প্রাইভেট একটি প্রেস থেকে… এটা তো করতে পারেন না। ব্যালট পেপার ছাপানো হবে সেটা সরকারি কোনও প্রেস…বিজি প্রেস হতে পারে অথবা অন্য কোনও প্রেস থেকে। সেই ব্যালট পেপারে কোনও নম্বর নেই… এটা রহস্যজনক। ব্যালট পেপার ছাপানো হচ্ছে প্রাইভেট কোনও প্রেস থেকে, যেটার মালিকের সঙ্গে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক আছে, যা প্রমাণিত হয়েছে। তাহলে রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব মিলিয়ে কোনও একটা গভীর নীলনকশা তৈরি হচ্ছে কিনা, টার্গেট করে যেখানে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে… ‘আমরা আওয়ামী লীগকে তাড়িয়েছি, এখন তাদের (বিএনপি) ঘায়েল করতে হবে…’, এই একটা কোনও মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে কিনা সেটা আজ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে।’

রিজভী বলেন, ‘আমরা যেটা দেখছি, সেটা গণতন্ত্রের জন্যও বিপজ্জনক, গণতন্ত্রের চর্চার জন্যও বিপজ্জনক এবং মানুষের যে ধর্মীয় চেতনা এটার জন্যও বিপজ্জনক। এখানে মানুষ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, আবার এসে টেলিভিশনে নাটকও দেখেন, গানও শোনেন। কিন্তু আপনি যখন একপাক্ষিক করে ফেলবেন সমাজ, একটা নতুন ধরনের ফ্যাসিবাদের রূপ নেবে।’

তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত পর্যায় হলো উগ্র সাম্প্রদায়িকতা এবং উগ্র ধর্মীয় রাজনীতি এবং এটা আসলে পরে আরও সর্বনাশ। মেয়েরা কীভাবে চলবে সে তো মেয়েদের অধিকার। এটা কেড়ে নেওয়া হলে, মেয়েদের যে অধিকার সেটা হরণ করা হলে ভয়ংকর পরিণতি হবে এবং দেখা গেছে উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতি যেসব দেশে চলছে সেসব দেশে মেয়েদের কোনও অধিকার নেই।’

ডাকসু-জাকসুতে ভোট ইঞ্জিনিয়ারিং

রিজভী বলেন, ‘কেউ কেউ মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের ফলাফল হয়েছে। গণতন্ত্রে সাধারণ ছাত্র সমাজের ইচ্ছার প্রতিফলন তার বিরুদ্ধাচরণ করি না। কিন্তু এই ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য যদি কোনও ইঞ্জিনিয়ারিং হয়, এটা কিন্তু ধরা পড়বে। যেটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে।’তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন এটা উৎসবের মতো হয়। যে উৎসবে পূর্ববর্তী ছাত্র সংসদের ভিপি-জিএস ছিলেন তারা কথা বলেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, তিনি কোড অব কন্ডাক্ট তৈরি করছেন, বাইরের কেউ আসতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয় বিচ্ছিন্ন কোনও দেশ নাকি? ভ্যাটিকেন সিটি তো নয়… দেশের মধ্যে দেশ তো না। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর একটা উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সরকারের কিছু মানুষের সঙ্গে যোগসূত্র হয়ে একটা একচেটিয়া নির্বাচন করার প্রচেষ্টা করেছেন; যাতে একচেটিয়া একটা ফলাফল তৈরি করা যায়।’

তাদের আসল রূপ

রিজভী বলেন, ‘তাদের ভান্ডামি দেখেন–যারা ছাত্রলীগের নেতা সেজে ক্যাম্পাসে অবস্থান করেছে, হেলমেট পরে ছাত্রদলসহ অন্যান্য দলের কর্মীদের আঘাত করেছে, আবার শেখ হাসিনার পতনের পর আসল রূপ নিয়ে ছাত্র শিবির হয়ে গেলেন…। এই যে ঘটনা, এটা জনগণের কাছে উন্মোচিত হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত গোপনে তারা প্রচার চালায় যে বিএনপি চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত। বিএনপি বৃহত্তর দল… কেউ না কেউ দুষ্টু চক্র থাকতে পারে। এই চক্র নানা ধরনের কাজ করতে পারে। দল যদি এটা নীরবে সহ্য করে তাহলে সেটা দলের দোষ। আর দল যদি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় তাহলে দল সঠিক পথে আছে। দুর্ভাগ্য, কিছু গণমাধ্যমে তাদের সঙ্গে মিলে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যায় সব সময়।’

তাদের উত্থানে আমি আতঙ্কিত

রিজভী বলেন, ‘যে ছাত্র সংগঠনটি সম্পর্কে বলা হচ্ছে তাদের খুব জনপ্রিয়তা কিন্তু আমি আতঙ্কিত বোধ করি। তাদের রাজনৈতিক দলটি (জামায়াত) কখনোই এ দেশের যে পলিটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট– প্রথমে পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে। তাহলে তারা ব্রিটিশকে পছন্দ করেন, উপনিবেশবাদকেই পছন্দ করেন। ঠিক একাত্তর সালেও তারা সেই ভূমিকা রাখলো। আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করলো। আমরা যখন দেখছি, এই অঞ্চলের মানুষ পশ্চিমাদের দ্বারা বঞ্চিত সমস্ত দিক থেকে, শিক্ষা-দীক্ষা, অর্থনীতিসহ সব দিক থেকে, তখন এটা মুক্তিযুদ্ধে টার্ন নিলো, জামায়াত তখন বিরোধিতা করলো। তারপর জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় তারা রাজনীতি করার সুযোগ পেলো। তারপরে যত ঘটনা হয়েছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করেছে জামায়াত।’তিনি বলেন, ‘১৯৮৬ সালে স্বৈরাচারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াত গেলো, ১৯৯৫-৯৬ সালে শেখ হাসিনার সঙ্গে তারা বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করলো, এরপরে যেই ২৪-এর আন্দোলন শেষ হলো, তারা বললো আমরা ভারতের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলবো আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দেবো। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার-টাকা চুরি করলো আওয়ামী লীগের নেতারা, ছেলে-মেয়ে-ভাগ্নে-ভাগ্নিকে সরকারি প্লট দিলো, কোটি কোটি টাকা পাচার হলো বিদেশে, লন্ডনে হাসিনার ভাগ্নি, সেও একটা ফ্ল্যাট পায়, তাদের টাকার কোনও হিসাব নাই, চট্টগ্রামের এক আওয়ামী লীগের নেতা কিনা লন্ডনেই ১৩০টা বাড়ি পাওয়া গেছে– গোটা দেশের জনগণের টাকা লুণ্ঠন করে একটা জাতিকে ধ্বংস করার যে পরিকল্পনা নিয়েছিল শেখ হাসিনা, তাকে ক্ষমা করে দেবে? বিভিন্ন জায়গায় তাদের এই লুটপাট, ভয়ংকর অত্যাচার-অবিচার, যেখানে তাদের অপরাধের বিচার হওয়া জরুরি এবং কিছু বিচার চলছে, কত আন্দোলনকারীরা, বিধবারা, মা-স্বজনহারা আর্তনাদ করছেন, এরপরে তারা বলে দিলেন ক্ষমা করে দেবো।’

আওয়ামী লীগারদের ঠাঁই হচ্ছে জামায়াতে

রিজভী বলেন, ‘এখন আমরা খবর পাই, বিভিন্ন এলাকায় ওই সব নিপীড়নকারী, নির্যাতনকারী আওয়ামী লীগারদের জামায়াতের সদস্য করা হচ্ছে। এর প্রমাণ আছে, ডকুমেন্ট আছে– সামাজিক মাধ্যমে সব প্রকাশ হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি ইঞ্জিনিয়ার ভাইদের বলি, আপনাদের মধ্যে ফ্যাসিবাদের দোসররা, যাদের বিভিন্ন জায়গায় ছবি আছে, অতীত কর্মকাণ্ড আছে, তারা যেন আপনাদের এই সংগঠনে ঢুকতে না পারে এটা আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে।’

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিইএব) আহ্বায়ক মো. হানিফ ও সদস্য সচিব কাজী শাখাওয়াত হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির সাইফুল আলম নিরবসহ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা বক্তব্য রাখেন।