জিওব্যাগে শ্যাওলার আস্তরণ, কুয়াকাটায় ভ্রমণ আতঙ্কে পর্যটকরা

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের রূপ আর সৌন্দর্য এখন ভয়ংকর ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সৈকতে পিচ্ছিল জিওব্যাগ-পর্যটকদের হাঁটাচলায় বিপদ, সৈকতের ভাঙন রোধে বসানো জিওব্যাগগুলোতে শ্যাওলা জমে পিচ্ছিল হয়ে পড়েছে, ফলে প্রতিদিনই পর্যটকদের পা পিছলে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। আনন্দের ভ্রমণ তাই অনেকের জন্য রূপ নিচ্ছে আতঙ্কের যাত্রায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সৈকতের বিভিন্ন স্থানে থাকা জিওব্যাগের উপর হাঁটতে গিয়ে পর্যটকরা পড়ে গিয়ে হাত-পা ছুলে যাচ্ছে, কেউ কেউ মচকেও যাচ্ছেন। যদিও এখনো বড় ধরনের দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি, তবে ঝুঁকি দিনদিন বাড়ছে।
এছাড়া সমুদ্রের ধারাবাহিক ঢেউয়ের আঘাতে সৈকতের মাটিতে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। হাঁটার সময় অসাবধান হলেই পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, সৈকতের নিচে চাপা পড়া পুরনো ভবনের ভগ্নাবশেষও এখন বিভিন্ন জায়গায় দৃশ্যমান। ভাঙা দেয়ালের অংশবিশেষ পানির ধারে জেগে উঠে আরও বিপদজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, জোয়ারের টানে সৈকতের পানির মধ্যে এখন একটি তালগাছের গোড়াও দৃশ্যমান হয়ে পড়েছে। যা কুয়াকাটার ভঙ্গুর বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক সাব্বির হোসেন বলেন,
“কুয়াকাটায় আসার পর বুঝলাম হাঁটাচলাও এখানে এখন চ্যালেঞ্জ। আমি নিজে পা পিছলে পড়ে ব্যথা পেয়েছি। সবাইকে সাবধানে চলাফেরা করতে বলছি।”
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফ বলেন, “আগে এই সৈকত ছিল ঝুঁকিমুক্ত, এখন যেখানে সেখানে গর্ত আর ভাঙা কাঠামো। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
পর্যটন ব্যবসায়ী মো. রহমান জানান,”কুয়াকাটা পর্যটকদের জন্য নিরাপদ না থাকলে আমাদের ব্যবসায় ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। তাই দ্রুত জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
এদিকে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সৈকতের জিওব্যাগ স্থাপন ও ভাঙন রোধ প্রকল্প নিয়ে দ্রুত পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এমন আতঙ্কের মধ্যেও ঘটেছে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। ২৬ এপ্রিল দুপুর ১টার দিকে সৈকতের জিওব্যাগের ফাঁকে ছোট-বড় গর্তে বা নালায় স্থানীয় এক জেলেকে জাল ফিক দিয়ে মাছ ধরতে দেখা যায়। উপস্থিত পর্যটকদের জন্য এটি কিছুটা আনন্দের মুহূর্ত হলেও, সার্বিক নিরাপত্তা ঝুঁকি কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাচ্ছে না।
পর্যটক ও স্থানীয়রা একবাক্যে বলছেন, কুয়াকাটার সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা টিকিয়ে রাখতে দ্রুত ও টেকসই উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।