০৪:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

তথ্য গোপন করে নিজ এলাকায় চাকুরী করছেন মতলব উত্তর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মনির হোসেন

শামীম আহম্মেদ জয়

তথ্য গোপন করে জালিয়াতির মাধ্যমে নিজ এলাকায় দিব্যি চাকুরী করে যাচ্ছেন মতলব উত্তর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. মনির হোসেন। তিনি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজিকান্দির ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামের, পো. ভেদুরিয়া বাজার, খান বাড়ির মো. আলাউদ্দিন খান এবং মাতা রহিমা বেগমের পুত্র। জাতীয় পরিচয়পত্র মোতাবেক তাঁর স্থায়ী ঠিকানা চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর হলেও চাকুরির রেকর্ডপত্র অনুযায়ী তার স্থায়ী ঠিকানা এখন বগুড়া জেলার সদর উপজেলার বগুড়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড বলে তিনি জানান। তিনি ভূয়া জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তাঁর স্থায়ী ঠিকানা গোপন করে নিজ এলাকায় অনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে চাকুরি করে গেলেও তা সরকারি কোন নথিপত্রে উল্লেখ নেই। তিনি তথ্য গোপন করেই সরকারি চাকুরিতে বহাল রয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট সূত্র। চাকুরিতে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্যই দুটো স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করে যাচ্ছেন বলে প্রতীয়মান হয়। তবে চাঁদপুর নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে মতলব উত্তরে আর বর্তমান ঠিকানা হিসেবে বগুড়া জেলা সদরের ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে। তথ্য গোপন করলেও তাঁর স্থায়ী ঠিকানা মতলব উত্তরে তো বটেই তিনি মতলব উত্তর উপজেলার এখলাছপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়াও করেছেন বলে এলাকাবাসী জানান। এমনকি তিনি ইতিপূর্বে এলাকার কৃতিসন্তান হিসেবে গতবছর নিজ খরচে অনুষ্ঠান আয়োজন করে এখলাছপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সংবর্ধনাও গ্রহণ করেছেন।
বর্তমানে তিনি চাকুরিকালীন ঠিকানা বগুড়া জেলা সদর দেখিয়ে জালিয়াতি করে তিনি সরকারি চাকুরিতে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন বলে-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান। জাতীয় পরিচয়পত্র মোতাবেক চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলা তার স্থায়ী ঠিকানা। মতলব উত্তর উপজেলায় তাঁর পৈত্রিক ভিটেবাড়ি হলেও চাকুরির ঠিকানায় দেখানো হয়েছে বগুড়া জেলা সদর। অথচ মতলব উত্তরে তাঁর পৈত্রিক বাড়ীতে এখনো তার ভাই ও আত্মীয়-স্বজনরা দিব্যি বসবাস করে আসছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রকৌশলী মনির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আসলে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজিকান্দি এলাকায় আমার নিজ বাড়ি হলেও তা বর্তমানে নেই। নদী ভেঙ্গে নিয়ে গেছে আমাদের বাড়ী। নদী ভাঙ্গার পর আমার বাবা সাভারে গিয়ে বসতি স্থাপন করেন। পরে আমি বগুড়া জেলাতে স্থায়ীভাবে বসবাস করি। বর্তমানে সেখানে আমার বাড়ী রয়েছে। তবে সেই সূত্র ধরে তাঁর মতলব উত্তরের নিজ গ্রামে গিয়ে দেখা যায় তাদের বাড়ী নদীতে ভেঙ্গে যায়নি বরং তাদের সেই বাড়িতে ভাই ব্রাদাররা পরিবারসহ নির্বিঘ্নে বসবাস করছেন।

সূত্র জানায়, তাঁর ভূয়া জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলা উল্লেখ করা হলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে বর্তমানে বসবাস করছেন ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার রায়ের বাজার মুক্তি সিনেমা হল রোডের নিজ ফ্ল্যাটে। এদিকে বগুড়ায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায় বগুড়ার তার বাড়ি নং ৮৩৪-এ/৯৪২, খান্দার ৯নং ওয়ার্ড, বগুড়া পৌরসভা, বগুড়া সদর, বগুড়া জেলা। আরো জানা যায় যে, উক্ত ঠিকানায় তার বাড়িটি অত্যন্ত ব্যায়বহুল আলিশান বাড়ী। এছাড়াও ঢাকার মোহাম্মদপুরে রায়ের বাজার মুক্তি সিনেমা হল রোডে কোটি টাকা মূল্যের নিজস্ব ফ্ল্যাট, ঢাকায় দামী প্লট ও সাভারেও অনেক সম্পত্তি রয়েছে বলে সূত্র জানায়। এছাড়া মতলব উত্তরের গ্রামের বাড়ীতে রয়েছে স্থাপনা। তার একাধিক বাড়ি ও এমন বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দম্ভ করে বলেন- ‘বাড়িতো থাকবেই, কেউতো আর রাস্তায় থাকে না’। আমার কোথায় কি আছে তা জানতে আপনাদেরকে আমি সহযোগীতা করবো। জানা যায় পৈত্রিক সূত্রে তিনি তেমন কোন সম্পদের মালিক ছিলেন না। তিনি ব্যক্তি জীবনে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী কোর্স করে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে ২য় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে সরকারী চাকুরিতে যোগদান করেন। তবে কিভাবে বর্তমানে এতো কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেলেন তা কেউ বলতে পারছে না।

অপরদিকে সরকারি চাকুরির বিধি এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী নিজ জেলায় পোস্টিং এর বিধান না থাকলেও তথ্য গোপন করে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তিনি নির্বিঘ্নে নিজ এলাকায় চাকুরি করে যাচ্ছেন কিভাবে তা এখন সকলের প্রশ্ন । এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান কবির সাংবাদিকদের বলেন, আমি জানি তাঁর বাড়ি বগুড়া জেলা শহরে। আর সেটাই তাঁর স্থায়ী ঠিকানা। মতলব উত্তরে তাঁর স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে আমার জানা নেই। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী ঠিকানা যেটা থাকে সেটাই চাকুরির ঠিকানা হিসেবে ধরা হয়। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে অন্য কোন অভিযোগ সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে স্থায়ী ঠিকানার স্থলে জালিয়াতি করে অন্য ঠিকানা ব্যবহার করে চাকুরি করলে তা খতিয়ে দেখা হবে। জানা যায় ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর মতলব উত্তর উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী হিসেবে তথ্য গোপন করে নিজ এলাকায় যোগদান করেন। সূত্র থেকে সাংবাদিকদের বলেন, নিজ অফিসে পৈত্রিক এলাকার লোকজন অফিসের আশেপাশে বসিয়ে রেখে দাপট দেখিয়ে যোগদানের পর থেকেই তিনি স্বজন প্রীতির মাধ্যমে নিজের পছন্দমতো লোকদের কাজ প্রদান করেন এবং সেবা প্রার্থী বিশেষ করে যে সমস্ত ঠিকাদার তার পছন্দের নন তাদের কাজকর্মে অযথা হয়রানিসহ দুর্ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে সাবেক এমপির ছত্রছায়ায় থেকে তিনি আরো অপরিতিরোধ্য হয়ে উঠেন। যেকোন কাজকর্মে তাহার সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত বলে উপজেলা পরিষদকে চাপিয়ে দিতেন বলে জানা যায়। যা ছিলো ওপেন সিক্রেট। এদিকে মতলব উত্তর উপজেলায় তার কর্মস্থলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, তিনি নিজ এলাকার প্রভাব খাঁটিয়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তার ইচ্ছেমতো কাজ প্রদান করেন -একথা সঠিক। এতে প্রকৃত ঠিকাদাররা কাজ না পাওয়ারও অভিযোগ করেন তারা।

যোগ্যতা থাকা স্বত্তেও অন্য উপজেলার ঠিকাদারদের কাজ না দিয়ে টাকার বিনিময়ে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন ঠিকাদার। পার্সেন্টিজ ছাড়া কোন কাজ দেননা- বলে তারা জানান। এ বিষয়ে ঠিকাদার সূত্রে আরো জানা যায় যে, প্রত্যেক কাজের ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন ছাড়া কোন কাজ/বিল পাওয়া যায়না। কমিশন বানিজ্যের কারণে কাজের মান ধরে রাখাও কষ্ট হয় বলে অভিযোগ করেন। উক্ত কমিশনের টাকা তিনি অধিকাংশ নিজে রেখে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জনের কমিশন ভাগ-ভাটোয়ারা করে তিনি পৌঁছে দেন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান।

এছাড়াও প্রকৌশলী মনির হোসেন সাবেক এমপির ঘনিষ্টভাজন হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন এবং কেউ তার মতের বাহিরে গেলে তাকে সাবেক এমপি সাহেবের লোকজন দিয়ে বিভিন্নভাবে নাজেহাল ও হয়রানি করাতেন। তিনি এখনো বিগত সরকারের দোসর হিসেবে মতলব উত্তর উপজেলায় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তিনি গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চলমান প্রকল্পের কাজ শেষ না হলেও অর্থের ছাড় করিয়ে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে অসমাপ্ত কোন কাজের বিল নেই’। এছাড়াও জুন/২৪ ক্লোজিং এর সময় প্রাথমিক বিদ্যালেয়ের অসমাপ্ত কাজের বিলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের প্রায় কোটি টাকার বিল নিজের জিম্মায় নিজের এবং অন্য অফিসারের যৌথ স্বাক্ষরের ব্যাংক হিসাবে জমা রাখার অভিযোগ রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী কোন কাজের বিল সরকারী কর্মকর্তাদের ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা বেআইনী ও গর্হিত কাজ। এছাড়াও কাজ শেষে কমিশন ছাড়া কোন ঠিকাদারের বিল এবং জামানতের টাকা ফেরত দেননা বলে অভিযোগ রয়েছে। বিলের রেকর্ডপত্র ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট যাচাই করলে তার সত্যতা পাওয়া যাবে বলে জানা যায়। নিজ এলাকায় কর্মস্থল হওয়ার কারণে অনৈতিক প্রভাব খাঁটানোর পাশাপাশি তিনি স্বজন প্রীতির মাধ্যমে ঠিকাদারদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে স্থানীয় উন্নয়ন কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টির পাশাপাশি মানসম্মতভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে দায়সারাভাবে কাজ করছেন বলে অনেক ঠিকাদার সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন। জানা যায়, ইতোপূর্বে তিনি ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায় কর্মরত ছিলেন। সেখানেও তাহার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান। তিনি এসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হয়ে শুধুমাত্র তদবির ও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অনৈতিকভাবে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন যাবত ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রকৌশলীর পদে নিযুক্ত রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টগণ জানান। সহকারী প্রকৌশলী হয়ে কিভাবে দীর্ঘদিন উপজেলা প্রকৌশলীর পদে নিযুক্ত হয়েছেন তা নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট ধোঁয়াশা। এছাড়া মতলব উত্তর উপজেলা এলজিইডি অফিসের হিসাবরক্ষক কাম কম্পিউটার অপারেটর মানিক উপজেলা প্রকৌশলীর সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির সকল কর্মে সহযোগীতা করেন বলে অনেকে অভিযোগ করেন। অভিযোগে জানা যায় মানিক দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর যাবত একই কর্মস্থলে মতলব উত্তর উপজেলার এলজিইডি অফিসে কর্মরত আছেন। একারণে তিনিও হয়ে উঠেছেন একচ্ছত্র অধিপতির মতো। তিনি অনেককে বলেন, ‘আমার হেড অফিসে লোক আছে, কেউ আমাকে কিছু করতে পারবে না।’তিনিও বিগত সরকারের ঘনিষ্ট লোক হিসেবে উপজেলায় পরিচিত।

সরকারি বিধি অনুযায়ী এক কর্মস্থলে ৩ বছরের অধিক সময় থাকা না গেলেও তিনি কিভাবে ১৫-১৬ বছর পার করলেন তা কেউ জানে না। এব্যাপারে চাঁদপুর জেলার এলজিইডির নির্বাহী প্রকোশলী আহসান কবিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী এক কর্মস্থলে ৩ বছরের অধিক থাকা যায় না। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাইলে বেশি সময় থাকতে। বিশেষ করে ছোট পোস্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি ৩ বছর পর পর বদলি না করে ক্ষেত্র বিশেষে ব্যতয়ও হয়ে থাকে। কিন্তু উপরের পোস্টের কর্মকর্তাদের ৩ বছর পর পর বাধ্যতামূলক বদলি হতে হয়। মতলব উত্তর উপজেলা এলজিইডি অফিসের মানিক সাহেব কিভাবে ১৫-১৬ বছর একই কর্মস্থলে আছেন তা আমার জানা নেই। অভিযোগ রয়েছে, মতলব উত্তর উপজেলা এলজিইডি অফিসের হিসাব রক্ষক কাম কম্পিউটার অপারেটর মানিক উপজেলা প্রকৌশলীর প্রভাব খাঁটিয়ে তিনিও দিব্যি পার্সেন্টিজের কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন খুব ভালোভাবেই। টু পাইস ছাড়া কোন বিল/ফাইল ছাড় দেন না তিনি নিজেও। তবে এ ব্যাপারে ঐ অফিসের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ ব্যাপারে হিসাবরক্ষক মানিকের কাছে একই কর্মস্থলে ১৫-১৬ বছর কিভাবে চাকুরি করেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে কিভাবে এখানে রয়েছি তা আমি জানি না, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই ভালো করে জানেন। তাই ঠিকাদার ও স্থানীয় এলাকাবাসী মনে করেন মতলব উত্তর উপজেলা প্রকৌশলীকে নিজ এলাকায় কিভাবে সরকার পোস্টিং দিয়েছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা জানতাম না তাঁর বাড়ি মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজিকান্দি ইউনিয়নে। তিনি কারো কাছে বলেছেন তাঁর বাড়ী বগুড়ায় আবার কারো কাছে বলেছেন ঢাকায়। অথচ তিনি বিভ্রান্তিমূলক ঠিকানা ব্যবহার করে নিজ এলাকায় অনৈতিকভাবে স্থানীয় প্রভাব খাঁটিয়ে চাকরি করে যাচ্ছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।তবে তিনি নিজের ভুয়া স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করে সরকারি চাকুরি নিয়েছেন এমন অভিযোগও করেছেন অনেকে। সরকারি চাকুরি বিধি অনুযায়ী কেউ স্থায়ী ঠিকানা জালিয়াতি করলে তা গুরুতর অপরাধ হিসেবে ধরা হয়। এছাড়াও তথ্য গোপন করে জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করাও বেআইনী। তিনি চাকুরির স্থায়ী ঠিকানায় না দেখিয়ে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে কেন জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করেছেন সেটাই এখন সবার প্রশ্ন। এছাড়া তিনিও কিভাবে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন তাও সঠিক তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে সকলে মনে করেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

আপডেট: ০১:৫৬:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
৩১

তথ্য গোপন করে নিজ এলাকায় চাকুরী করছেন মতলব উত্তর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মনির হোসেন

আপডেট: ০১:৫৬:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

তথ্য গোপন করে জালিয়াতির মাধ্যমে নিজ এলাকায় দিব্যি চাকুরী করে যাচ্ছেন মতলব উত্তর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. মনির হোসেন। তিনি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজিকান্দির ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামের, পো. ভেদুরিয়া বাজার, খান বাড়ির মো. আলাউদ্দিন খান এবং মাতা রহিমা বেগমের পুত্র। জাতীয় পরিচয়পত্র মোতাবেক তাঁর স্থায়ী ঠিকানা চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর হলেও চাকুরির রেকর্ডপত্র অনুযায়ী তার স্থায়ী ঠিকানা এখন বগুড়া জেলার সদর উপজেলার বগুড়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড বলে তিনি জানান। তিনি ভূয়া জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তাঁর স্থায়ী ঠিকানা গোপন করে নিজ এলাকায় অনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে চাকুরি করে গেলেও তা সরকারি কোন নথিপত্রে উল্লেখ নেই। তিনি তথ্য গোপন করেই সরকারি চাকুরিতে বহাল রয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট সূত্র। চাকুরিতে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্যই দুটো স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করে যাচ্ছেন বলে প্রতীয়মান হয়। তবে চাঁদপুর নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে মতলব উত্তরে আর বর্তমান ঠিকানা হিসেবে বগুড়া জেলা সদরের ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে। তথ্য গোপন করলেও তাঁর স্থায়ী ঠিকানা মতলব উত্তরে তো বটেই তিনি মতলব উত্তর উপজেলার এখলাছপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়াও করেছেন বলে এলাকাবাসী জানান। এমনকি তিনি ইতিপূর্বে এলাকার কৃতিসন্তান হিসেবে গতবছর নিজ খরচে অনুষ্ঠান আয়োজন করে এখলাছপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সংবর্ধনাও গ্রহণ করেছেন।
বর্তমানে তিনি চাকুরিকালীন ঠিকানা বগুড়া জেলা সদর দেখিয়ে জালিয়াতি করে তিনি সরকারি চাকুরিতে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন বলে-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান। জাতীয় পরিচয়পত্র মোতাবেক চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলা তার স্থায়ী ঠিকানা। মতলব উত্তর উপজেলায় তাঁর পৈত্রিক ভিটেবাড়ি হলেও চাকুরির ঠিকানায় দেখানো হয়েছে বগুড়া জেলা সদর। অথচ মতলব উত্তরে তাঁর পৈত্রিক বাড়ীতে এখনো তার ভাই ও আত্মীয়-স্বজনরা দিব্যি বসবাস করে আসছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রকৌশলী মনির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আসলে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজিকান্দি এলাকায় আমার নিজ বাড়ি হলেও তা বর্তমানে নেই। নদী ভেঙ্গে নিয়ে গেছে আমাদের বাড়ী। নদী ভাঙ্গার পর আমার বাবা সাভারে গিয়ে বসতি স্থাপন করেন। পরে আমি বগুড়া জেলাতে স্থায়ীভাবে বসবাস করি। বর্তমানে সেখানে আমার বাড়ী রয়েছে। তবে সেই সূত্র ধরে তাঁর মতলব উত্তরের নিজ গ্রামে গিয়ে দেখা যায় তাদের বাড়ী নদীতে ভেঙ্গে যায়নি বরং তাদের সেই বাড়িতে ভাই ব্রাদাররা পরিবারসহ নির্বিঘ্নে বসবাস করছেন।

সূত্র জানায়, তাঁর ভূয়া জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলা উল্লেখ করা হলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে বর্তমানে বসবাস করছেন ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার রায়ের বাজার মুক্তি সিনেমা হল রোডের নিজ ফ্ল্যাটে। এদিকে বগুড়ায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায় বগুড়ার তার বাড়ি নং ৮৩৪-এ/৯৪২, খান্দার ৯নং ওয়ার্ড, বগুড়া পৌরসভা, বগুড়া সদর, বগুড়া জেলা। আরো জানা যায় যে, উক্ত ঠিকানায় তার বাড়িটি অত্যন্ত ব্যায়বহুল আলিশান বাড়ী। এছাড়াও ঢাকার মোহাম্মদপুরে রায়ের বাজার মুক্তি সিনেমা হল রোডে কোটি টাকা মূল্যের নিজস্ব ফ্ল্যাট, ঢাকায় দামী প্লট ও সাভারেও অনেক সম্পত্তি রয়েছে বলে সূত্র জানায়। এছাড়া মতলব উত্তরের গ্রামের বাড়ীতে রয়েছে স্থাপনা। তার একাধিক বাড়ি ও এমন বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দম্ভ করে বলেন- ‘বাড়িতো থাকবেই, কেউতো আর রাস্তায় থাকে না’। আমার কোথায় কি আছে তা জানতে আপনাদেরকে আমি সহযোগীতা করবো। জানা যায় পৈত্রিক সূত্রে তিনি তেমন কোন সম্পদের মালিক ছিলেন না। তিনি ব্যক্তি জীবনে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী কোর্স করে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে ২য় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে সরকারী চাকুরিতে যোগদান করেন। তবে কিভাবে বর্তমানে এতো কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেলেন তা কেউ বলতে পারছে না।

অপরদিকে সরকারি চাকুরির বিধি এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী নিজ জেলায় পোস্টিং এর বিধান না থাকলেও তথ্য গোপন করে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তিনি নির্বিঘ্নে নিজ এলাকায় চাকুরি করে যাচ্ছেন কিভাবে তা এখন সকলের প্রশ্ন । এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান কবির সাংবাদিকদের বলেন, আমি জানি তাঁর বাড়ি বগুড়া জেলা শহরে। আর সেটাই তাঁর স্থায়ী ঠিকানা। মতলব উত্তরে তাঁর স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে আমার জানা নেই। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী ঠিকানা যেটা থাকে সেটাই চাকুরির ঠিকানা হিসেবে ধরা হয়। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে অন্য কোন অভিযোগ সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে স্থায়ী ঠিকানার স্থলে জালিয়াতি করে অন্য ঠিকানা ব্যবহার করে চাকুরি করলে তা খতিয়ে দেখা হবে। জানা যায় ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর মতলব উত্তর উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী হিসেবে তথ্য গোপন করে নিজ এলাকায় যোগদান করেন। সূত্র থেকে সাংবাদিকদের বলেন, নিজ অফিসে পৈত্রিক এলাকার লোকজন অফিসের আশেপাশে বসিয়ে রেখে দাপট দেখিয়ে যোগদানের পর থেকেই তিনি স্বজন প্রীতির মাধ্যমে নিজের পছন্দমতো লোকদের কাজ প্রদান করেন এবং সেবা প্রার্থী বিশেষ করে যে সমস্ত ঠিকাদার তার পছন্দের নন তাদের কাজকর্মে অযথা হয়রানিসহ দুর্ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে সাবেক এমপির ছত্রছায়ায় থেকে তিনি আরো অপরিতিরোধ্য হয়ে উঠেন। যেকোন কাজকর্মে তাহার সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত বলে উপজেলা পরিষদকে চাপিয়ে দিতেন বলে জানা যায়। যা ছিলো ওপেন সিক্রেট। এদিকে মতলব উত্তর উপজেলায় তার কর্মস্থলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, তিনি নিজ এলাকার প্রভাব খাঁটিয়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তার ইচ্ছেমতো কাজ প্রদান করেন -একথা সঠিক। এতে প্রকৃত ঠিকাদাররা কাজ না পাওয়ারও অভিযোগ করেন তারা।

যোগ্যতা থাকা স্বত্তেও অন্য উপজেলার ঠিকাদারদের কাজ না দিয়ে টাকার বিনিময়ে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন ঠিকাদার। পার্সেন্টিজ ছাড়া কোন কাজ দেননা- বলে তারা জানান। এ বিষয়ে ঠিকাদার সূত্রে আরো জানা যায় যে, প্রত্যেক কাজের ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন ছাড়া কোন কাজ/বিল পাওয়া যায়না। কমিশন বানিজ্যের কারণে কাজের মান ধরে রাখাও কষ্ট হয় বলে অভিযোগ করেন। উক্ত কমিশনের টাকা তিনি অধিকাংশ নিজে রেখে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জনের কমিশন ভাগ-ভাটোয়ারা করে তিনি পৌঁছে দেন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান।

এছাড়াও প্রকৌশলী মনির হোসেন সাবেক এমপির ঘনিষ্টভাজন হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন এবং কেউ তার মতের বাহিরে গেলে তাকে সাবেক এমপি সাহেবের লোকজন দিয়ে বিভিন্নভাবে নাজেহাল ও হয়রানি করাতেন। তিনি এখনো বিগত সরকারের দোসর হিসেবে মতলব উত্তর উপজেলায় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তিনি গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চলমান প্রকল্পের কাজ শেষ না হলেও অর্থের ছাড় করিয়ে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে অসমাপ্ত কোন কাজের বিল নেই’। এছাড়াও জুন/২৪ ক্লোজিং এর সময় প্রাথমিক বিদ্যালেয়ের অসমাপ্ত কাজের বিলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের প্রায় কোটি টাকার বিল নিজের জিম্মায় নিজের এবং অন্য অফিসারের যৌথ স্বাক্ষরের ব্যাংক হিসাবে জমা রাখার অভিযোগ রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী কোন কাজের বিল সরকারী কর্মকর্তাদের ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা বেআইনী ও গর্হিত কাজ। এছাড়াও কাজ শেষে কমিশন ছাড়া কোন ঠিকাদারের বিল এবং জামানতের টাকা ফেরত দেননা বলে অভিযোগ রয়েছে। বিলের রেকর্ডপত্র ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট যাচাই করলে তার সত্যতা পাওয়া যাবে বলে জানা যায়। নিজ এলাকায় কর্মস্থল হওয়ার কারণে অনৈতিক প্রভাব খাঁটানোর পাশাপাশি তিনি স্বজন প্রীতির মাধ্যমে ঠিকাদারদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে স্থানীয় উন্নয়ন কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টির পাশাপাশি মানসম্মতভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে দায়সারাভাবে কাজ করছেন বলে অনেক ঠিকাদার সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন। জানা যায়, ইতোপূর্বে তিনি ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায় কর্মরত ছিলেন। সেখানেও তাহার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান। তিনি এসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হয়ে শুধুমাত্র তদবির ও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অনৈতিকভাবে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন যাবত ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রকৌশলীর পদে নিযুক্ত রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টগণ জানান। সহকারী প্রকৌশলী হয়ে কিভাবে দীর্ঘদিন উপজেলা প্রকৌশলীর পদে নিযুক্ত হয়েছেন তা নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট ধোঁয়াশা। এছাড়া মতলব উত্তর উপজেলা এলজিইডি অফিসের হিসাবরক্ষক কাম কম্পিউটার অপারেটর মানিক উপজেলা প্রকৌশলীর সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির সকল কর্মে সহযোগীতা করেন বলে অনেকে অভিযোগ করেন। অভিযোগে জানা যায় মানিক দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর যাবত একই কর্মস্থলে মতলব উত্তর উপজেলার এলজিইডি অফিসে কর্মরত আছেন। একারণে তিনিও হয়ে উঠেছেন একচ্ছত্র অধিপতির মতো। তিনি অনেককে বলেন, ‘আমার হেড অফিসে লোক আছে, কেউ আমাকে কিছু করতে পারবে না।’তিনিও বিগত সরকারের ঘনিষ্ট লোক হিসেবে উপজেলায় পরিচিত।

সরকারি বিধি অনুযায়ী এক কর্মস্থলে ৩ বছরের অধিক সময় থাকা না গেলেও তিনি কিভাবে ১৫-১৬ বছর পার করলেন তা কেউ জানে না। এব্যাপারে চাঁদপুর জেলার এলজিইডির নির্বাহী প্রকোশলী আহসান কবিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী এক কর্মস্থলে ৩ বছরের অধিক থাকা যায় না। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাইলে বেশি সময় থাকতে। বিশেষ করে ছোট পোস্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি ৩ বছর পর পর বদলি না করে ক্ষেত্র বিশেষে ব্যতয়ও হয়ে থাকে। কিন্তু উপরের পোস্টের কর্মকর্তাদের ৩ বছর পর পর বাধ্যতামূলক বদলি হতে হয়। মতলব উত্তর উপজেলা এলজিইডি অফিসের মানিক সাহেব কিভাবে ১৫-১৬ বছর একই কর্মস্থলে আছেন তা আমার জানা নেই। অভিযোগ রয়েছে, মতলব উত্তর উপজেলা এলজিইডি অফিসের হিসাব রক্ষক কাম কম্পিউটার অপারেটর মানিক উপজেলা প্রকৌশলীর প্রভাব খাঁটিয়ে তিনিও দিব্যি পার্সেন্টিজের কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন খুব ভালোভাবেই। টু পাইস ছাড়া কোন বিল/ফাইল ছাড় দেন না তিনি নিজেও। তবে এ ব্যাপারে ঐ অফিসের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ ব্যাপারে হিসাবরক্ষক মানিকের কাছে একই কর্মস্থলে ১৫-১৬ বছর কিভাবে চাকুরি করেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে কিভাবে এখানে রয়েছি তা আমি জানি না, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই ভালো করে জানেন। তাই ঠিকাদার ও স্থানীয় এলাকাবাসী মনে করেন মতলব উত্তর উপজেলা প্রকৌশলীকে নিজ এলাকায় কিভাবে সরকার পোস্টিং দিয়েছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা জানতাম না তাঁর বাড়ি মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজিকান্দি ইউনিয়নে। তিনি কারো কাছে বলেছেন তাঁর বাড়ী বগুড়ায় আবার কারো কাছে বলেছেন ঢাকায়। অথচ তিনি বিভ্রান্তিমূলক ঠিকানা ব্যবহার করে নিজ এলাকায় অনৈতিকভাবে স্থানীয় প্রভাব খাঁটিয়ে চাকরি করে যাচ্ছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।তবে তিনি নিজের ভুয়া স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করে সরকারি চাকুরি নিয়েছেন এমন অভিযোগও করেছেন অনেকে। সরকারি চাকুরি বিধি অনুযায়ী কেউ স্থায়ী ঠিকানা জালিয়াতি করলে তা গুরুতর অপরাধ হিসেবে ধরা হয়। এছাড়াও তথ্য গোপন করে জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করাও বেআইনী। তিনি চাকুরির স্থায়ী ঠিকানায় না দেখিয়ে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে কেন জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করেছেন সেটাই এখন সবার প্রশ্ন। এছাড়া তিনিও কিভাবে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন তাও সঠিক তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে সকলে মনে করেন।