০২:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণের দাবিতে বরগুনায় মানববন্ধন ও সমাবেশ

মোঃ শাহজালাল

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন এবং গ্রামীণ জনপদে টেকসই ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিতকরণের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বরগুনা প্রেসক্লাব চত্বরে এ মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের উদ্দেশ্যে বলেন,
বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত, সমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আপনার মতো সৎ, মেধাবী ও যোগ্য ব্যক্তি দেশ পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। তারা বলেন, সারাদেশের ৮০ ভাগ অঞ্চলে প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজে নিয়োজিত রয়েছে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, যার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছেন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে যারা বিদ্যুৎ সেবা দিয়ে থাকেন, তাদের উপর ঔপনিবেশিক কায়দায় আরইবি কর্তৃক বিগত ৪৭ বছর যাবৎ বৈষম্য, শোষণ, নির্যাতন ও নিপীড়ন চলমান রয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পৃথক চাকুরীবিধি দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় আধুনিক ও টেকসই বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা বিনির্মাণ ব্যাহত হওয়াসহ যে সকল সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সেগুলো হলো পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের শুরু থেকে নিম্নমানের মালামাল দিয়ে নন-স্ট্যান্ডার্ড লাইন ও সাবস্টেশন তথা বিতরণ ব্যবস্থা নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ে আরইবির সরাসরি কোন দায়বদ্ধতা/জবাবদিহিতা না থাকায় সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে নিম্নমানের মালামাল (মিটার, ট্রান্সফরমার, তার, ইন্সুলেটর, সেফটি টুলস ইত্যাদি) ক্রয় ও সরবরাহ করে আসছে। এই নন-স্ট্যান্ডার্ড বিতরণ ব্যবস্থা ও নিম্নমানের মালামালের কারণে সৃষ্ট বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে জনসাধারণ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা প্রাপ্তির মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিদ্যুৎ কর্মীদের কষ্ট, দুর্দশা ও মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। আরইবি এককভাবে লাইন নির্মাণের মালামালসহ অন্যান্য সকল মালামাল ক্রয় করে থাকে। মাঠ পর্যায়ে কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকা, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব এবং পলিসি প্রণয়নে অদক্ষতার কারণে যথাসময়ে মালামাল ক্রয় ও সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ায় পবিসসমূহে প্রতিনিয়ত কোন না কোন আইটেমের ঘাটতি থাকছে। অপ্রয়োজনীয় মালামাল স্টোরে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত গ্রাহকগণ কাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং গ্রাহক প্রান্তে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

২০০৯ সালে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সমূহের গ্রাহক সংখ্যা ছিল মাত্র ৭০ লক্ষ, যা বর্তমানে ৩ কোটি ৬০ লক্ষ হয়েছে। প্রায় ০৫ গুন গ্রাহক বৃদ্ধিতে বিতরণ লাইন ও ইকুইপমেন্টের পরিমাণও সমহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পক্ষান্তরে শহরের পাশাপাশি দেশের গ্রামীণ জনপদেও বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীলতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সে অনুপাতে জনবলের সংখ্যা বৃদ্ধি না করায় কর্মরত কর্মচারীগণ ১২-১৬ ঘন্টা কাজ করার পরও গ্রাহকপ্রান্তে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন এবং অতিরিক্ত কাজের চাপে দুর্ঘটনায় বিদ্যুৎ কর্মী নিহতের হার বেড়েছে। দীর্ঘ ৪৭ বছরেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের নিজস্ব পরিচয় এবং পদমর্যাদা না থাকায় অন্য সকল দপ্তরের সাথে যোগাযোগ, সমন্বয়ে জটিলতাসহ সকল পর্যায়ে প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ২০১৫ সালে প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের শ্রেণীপ্রথা বিলুপ্ত করে গ্রেডিং (১-২০) প্রদান করা হয়; যা আরইবিতে বাস্তবায়ন করা হলেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে বাস্তবায়ন করা হয়নি। এছাড়াও আরইবি এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে অসংখ্য বৈষম্য বিদ্যমান। আরইবি তাদের নীতি প্রণয়নের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সমূহের উপর ৪৭ বছর ধরে অপশাসন চালিয়ে আসছেন। দুর্নীতি, অনিয়ম ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই পদোন্নতি স্থগিত, শাস্তিমূলক বদলি, সংযুক্তকরণ, বরখাস্তসহ নানা হয়রানী ও অডিটের নামে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। ধীরে ধীরে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ জমা হয়ে এবং স্বৈরাচারী প্রতিষ্ঠানের অপশাসন থেকে মুক্তির লক্ষ্যে আরইবি-পবিস একীভূতকরণ এবং সকল চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের ০২ দফা দাবি আদায়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল ও গ্রাহক সেবা চালু রেখে সারাদেশে একযোগে গত ০৫ মে, ২০২৪ তারিখ থেকে টানা ০৫দিন কর্মবিরতির ফলশ্রুতিতে বিদ্যুৎ বিভাগের তিনজন অতিরিক্ত সচিবের সমন্বয়ে একটি সমঝোতা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং কমবিরতি স্থগিত করা হয়। সন্তোষজনক ফলাফল না আসায় পুনরায় ০১ জুলাই থেকে টানা ১০ দিন কর্মবিরতির ফলে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব, তিনজন অতিরিক্ত সচিব, আরইবির উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং আরইবি-পবিস একীভূতকরণ/রিফর্ম এর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মহোদয় আরইবি-পবিস একীভূতকরণ/রিফর্ম এখন সময়ের দাবি হিসেবে উল্লেখ করেন।
সে লক্ষ্যে ১ আগস্ট বিদ্যুৎ বিভাগ, আরইবি এবং সমিতির কর্মকর্তার সমন্বয়ে ৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটির কার্যক্রম শুরু না হওয়া এবং দাবি বাস্তবায়নের দৃশ্যমান অগ্রগতি পরিলক্ষিত না হওয়ায় ২৪ আগস্ট ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে গণছুটির ঘোষণা দেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কবৃন্দ। যার প্রেক্ষিতে গত ২৭ আগস্ট উক্ত কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর ৪ সেপ্টেম্বর ২য় সভার তারিখ নির্ধারণপূর্বক সমিতি এবং আরইবির পক্ষ থেকে রিফর্ম সংক্রান্ত প্রস্তাব উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু আরইবি ২য় সভায় কোন প্রস্তাব উপস্থাপন করেনি। এরপর ১০ সেপ্টেম্বর পুনরায় সভা আয়োজন করা হলেও আরইবির পক্ষ থেকে রিফর্ম এর কোন প্রস্তাব উপস্থাপন না করে তারা রিফম/সংস্কার করেনি। পুনরায় ২৬ সেপ্টেম্বর কমিটির ৪র্থ সভা আয়োজন করা হলেও উক্ত সভায় আরইবি রিফর্ম সংক্রান্ত কোন প্রস্তাব দাখিল করেনি। বিদ্যুৎ বিভাগের সদিচ্ছা থাকলেও আরইবি’র অসহযোগিতার কারণে কমিটির কাজের অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আরইবি বিদ্যুৎ বিভাগের গঠিত কমিটির সিদ্ধান্তকে অমান্য করে সরকারের সংস্কার উদ্যোগকে বাঁধাগ্রস্ত করছে এবং দেশের সর্ববৃহৎ বিতরণ সংস্থার ৪৫ হাজার কর্মীর সাথে প্রহসন করে যাচ্ছে। ফলে বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ সিস্টেমের শতভাগ কর্মীর মনে তীব্র ক্ষোভ ও চরম অসন্তোষ বিরাজ করায় কর্মপরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়েছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বিদ্যমান সংকট নিরসনের জন্য ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নির্বাহী প্রধানগণ ইতোপূর্বে একাধিক বার আরইবি চেয়ারম্যান এবং বিদ্যুৎ বিভাগে পত্র প্রেরণ করেছেন। বিদ্যুৎ দেশের জরুরি এবং অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিবেচনায় যৌক্তিক সময়ের মধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুই দফা দাবি বাস্তবায়নপূর্বক দেশের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিক, টেকসই ও স্মার্ট বিতরণ
ব্যবস্থা বিনির্মাণ এবং নিরবচ্ছিন্ন ও উন্নত গ্রাহক সেবা নিশ্চিতকল্পে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করি।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের দুই দফা দাবি হলো- গ্রাহক সেবার মানোন্নয়ন, উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তুষ্টি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং টেকসই বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা বিনির্মাণে সকল বৈষম্য/দ্বৈতনীতির অবসানপূর্বক আরইবি-পবিস একীভূত করে অন্যান্য বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার ন্যায় রিফর্ম করতে হবে। সকল চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিত করতে হবে।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আমতলী জোনাল অফিসের ডিজিএম সঞ্জয় রায় বরগুনা জোনাল অফিসের আরব আলী শেখ পাথরকাটা জোনাল অফিসের বিজিএম মোঃ আব্দুস সালাম, পল্লী বিদ্যুতের বিলিং সহকারী মৌসুমী বেগম প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে নেতৃবৃন্দ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস বরাবরে বরগুনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

আপডেট: ০৩:২৯:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৮৮

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণের দাবিতে বরগুনায় মানববন্ধন ও সমাবেশ

আপডেট: ০৩:২৯:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন এবং গ্রামীণ জনপদে টেকসই ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিতকরণের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বরগুনা প্রেসক্লাব চত্বরে এ মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের উদ্দেশ্যে বলেন,
বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত, সমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আপনার মতো সৎ, মেধাবী ও যোগ্য ব্যক্তি দেশ পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। তারা বলেন, সারাদেশের ৮০ ভাগ অঞ্চলে প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজে নিয়োজিত রয়েছে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, যার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছেন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে যারা বিদ্যুৎ সেবা দিয়ে থাকেন, তাদের উপর ঔপনিবেশিক কায়দায় আরইবি কর্তৃক বিগত ৪৭ বছর যাবৎ বৈষম্য, শোষণ, নির্যাতন ও নিপীড়ন চলমান রয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পৃথক চাকুরীবিধি দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় আধুনিক ও টেকসই বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা বিনির্মাণ ব্যাহত হওয়াসহ যে সকল সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সেগুলো হলো পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের শুরু থেকে নিম্নমানের মালামাল দিয়ে নন-স্ট্যান্ডার্ড লাইন ও সাবস্টেশন তথা বিতরণ ব্যবস্থা নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ে আরইবির সরাসরি কোন দায়বদ্ধতা/জবাবদিহিতা না থাকায় সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে নিম্নমানের মালামাল (মিটার, ট্রান্সফরমার, তার, ইন্সুলেটর, সেফটি টুলস ইত্যাদি) ক্রয় ও সরবরাহ করে আসছে। এই নন-স্ট্যান্ডার্ড বিতরণ ব্যবস্থা ও নিম্নমানের মালামালের কারণে সৃষ্ট বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে জনসাধারণ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা প্রাপ্তির মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিদ্যুৎ কর্মীদের কষ্ট, দুর্দশা ও মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। আরইবি এককভাবে লাইন নির্মাণের মালামালসহ অন্যান্য সকল মালামাল ক্রয় করে থাকে। মাঠ পর্যায়ে কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকা, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব এবং পলিসি প্রণয়নে অদক্ষতার কারণে যথাসময়ে মালামাল ক্রয় ও সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ায় পবিসসমূহে প্রতিনিয়ত কোন না কোন আইটেমের ঘাটতি থাকছে। অপ্রয়োজনীয় মালামাল স্টোরে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত গ্রাহকগণ কাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং গ্রাহক প্রান্তে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

২০০৯ সালে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সমূহের গ্রাহক সংখ্যা ছিল মাত্র ৭০ লক্ষ, যা বর্তমানে ৩ কোটি ৬০ লক্ষ হয়েছে। প্রায় ০৫ গুন গ্রাহক বৃদ্ধিতে বিতরণ লাইন ও ইকুইপমেন্টের পরিমাণও সমহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পক্ষান্তরে শহরের পাশাপাশি দেশের গ্রামীণ জনপদেও বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীলতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সে অনুপাতে জনবলের সংখ্যা বৃদ্ধি না করায় কর্মরত কর্মচারীগণ ১২-১৬ ঘন্টা কাজ করার পরও গ্রাহকপ্রান্তে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন এবং অতিরিক্ত কাজের চাপে দুর্ঘটনায় বিদ্যুৎ কর্মী নিহতের হার বেড়েছে। দীর্ঘ ৪৭ বছরেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের নিজস্ব পরিচয় এবং পদমর্যাদা না থাকায় অন্য সকল দপ্তরের সাথে যোগাযোগ, সমন্বয়ে জটিলতাসহ সকল পর্যায়ে প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ২০১৫ সালে প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের শ্রেণীপ্রথা বিলুপ্ত করে গ্রেডিং (১-২০) প্রদান করা হয়; যা আরইবিতে বাস্তবায়ন করা হলেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে বাস্তবায়ন করা হয়নি। এছাড়াও আরইবি এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে অসংখ্য বৈষম্য বিদ্যমান। আরইবি তাদের নীতি প্রণয়নের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সমূহের উপর ৪৭ বছর ধরে অপশাসন চালিয়ে আসছেন। দুর্নীতি, অনিয়ম ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই পদোন্নতি স্থগিত, শাস্তিমূলক বদলি, সংযুক্তকরণ, বরখাস্তসহ নানা হয়রানী ও অডিটের নামে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। ধীরে ধীরে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ জমা হয়ে এবং স্বৈরাচারী প্রতিষ্ঠানের অপশাসন থেকে মুক্তির লক্ষ্যে আরইবি-পবিস একীভূতকরণ এবং সকল চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের ০২ দফা দাবি আদায়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল ও গ্রাহক সেবা চালু রেখে সারাদেশে একযোগে গত ০৫ মে, ২০২৪ তারিখ থেকে টানা ০৫দিন কর্মবিরতির ফলশ্রুতিতে বিদ্যুৎ বিভাগের তিনজন অতিরিক্ত সচিবের সমন্বয়ে একটি সমঝোতা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং কমবিরতি স্থগিত করা হয়। সন্তোষজনক ফলাফল না আসায় পুনরায় ০১ জুলাই থেকে টানা ১০ দিন কর্মবিরতির ফলে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব, তিনজন অতিরিক্ত সচিব, আরইবির উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং আরইবি-পবিস একীভূতকরণ/রিফর্ম এর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মহোদয় আরইবি-পবিস একীভূতকরণ/রিফর্ম এখন সময়ের দাবি হিসেবে উল্লেখ করেন।
সে লক্ষ্যে ১ আগস্ট বিদ্যুৎ বিভাগ, আরইবি এবং সমিতির কর্মকর্তার সমন্বয়ে ৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটির কার্যক্রম শুরু না হওয়া এবং দাবি বাস্তবায়নের দৃশ্যমান অগ্রগতি পরিলক্ষিত না হওয়ায় ২৪ আগস্ট ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে গণছুটির ঘোষণা দেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কবৃন্দ। যার প্রেক্ষিতে গত ২৭ আগস্ট উক্ত কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর ৪ সেপ্টেম্বর ২য় সভার তারিখ নির্ধারণপূর্বক সমিতি এবং আরইবির পক্ষ থেকে রিফর্ম সংক্রান্ত প্রস্তাব উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু আরইবি ২য় সভায় কোন প্রস্তাব উপস্থাপন করেনি। এরপর ১০ সেপ্টেম্বর পুনরায় সভা আয়োজন করা হলেও আরইবির পক্ষ থেকে রিফর্ম এর কোন প্রস্তাব উপস্থাপন না করে তারা রিফম/সংস্কার করেনি। পুনরায় ২৬ সেপ্টেম্বর কমিটির ৪র্থ সভা আয়োজন করা হলেও উক্ত সভায় আরইবি রিফর্ম সংক্রান্ত কোন প্রস্তাব দাখিল করেনি। বিদ্যুৎ বিভাগের সদিচ্ছা থাকলেও আরইবি’র অসহযোগিতার কারণে কমিটির কাজের অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আরইবি বিদ্যুৎ বিভাগের গঠিত কমিটির সিদ্ধান্তকে অমান্য করে সরকারের সংস্কার উদ্যোগকে বাঁধাগ্রস্ত করছে এবং দেশের সর্ববৃহৎ বিতরণ সংস্থার ৪৫ হাজার কর্মীর সাথে প্রহসন করে যাচ্ছে। ফলে বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ সিস্টেমের শতভাগ কর্মীর মনে তীব্র ক্ষোভ ও চরম অসন্তোষ বিরাজ করায় কর্মপরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়েছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বিদ্যমান সংকট নিরসনের জন্য ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নির্বাহী প্রধানগণ ইতোপূর্বে একাধিক বার আরইবি চেয়ারম্যান এবং বিদ্যুৎ বিভাগে পত্র প্রেরণ করেছেন। বিদ্যুৎ দেশের জরুরি এবং অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিবেচনায় যৌক্তিক সময়ের মধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুই দফা দাবি বাস্তবায়নপূর্বক দেশের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিক, টেকসই ও স্মার্ট বিতরণ
ব্যবস্থা বিনির্মাণ এবং নিরবচ্ছিন্ন ও উন্নত গ্রাহক সেবা নিশ্চিতকল্পে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করি।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের দুই দফা দাবি হলো- গ্রাহক সেবার মানোন্নয়ন, উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তুষ্টি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং টেকসই বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা বিনির্মাণে সকল বৈষম্য/দ্বৈতনীতির অবসানপূর্বক আরইবি-পবিস একীভূত করে অন্যান্য বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার ন্যায় রিফর্ম করতে হবে। সকল চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিত করতে হবে।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আমতলী জোনাল অফিসের ডিজিএম সঞ্জয় রায় বরগুনা জোনাল অফিসের আরব আলী শেখ পাথরকাটা জোনাল অফিসের বিজিএম মোঃ আব্দুস সালাম, পল্লী বিদ্যুতের বিলিং সহকারী মৌসুমী বেগম প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে নেতৃবৃন্দ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস বরাবরে বরগুনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করেন।