আর্থিক সংকটে চেম্বার বিক্রি করে মামলা চালাচ্ছেন কারাবন্দী সাবেক বিচারপতি মানিক
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানিতে হাজিরা দিতে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আনা হয় আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে। এ সময় আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা এই সাবেক বিচারপতির আর্থিক দৈন্যদশা নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন তার আইনজীবী মোরশেদ হোসেন।
তিনি জানান, এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দী বিচারপতি মানিক মামলা পরিচালনার খরচ চালাতে পারছেন না। আইনজীবীর ফি দিতে না পারায় তিনি এরই মধ্যে নিজের ল চেম্বারের সব বই বিক্রি করে দিয়েছেন এবং চেম্বারটিও বিক্রি করে দিয়েছেন নীলক্ষেতের এক পার্টির কাছে।
এর আগে, এদিন সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে নীল রঙের একটি প্রিজন ভ্যানে করে তাকে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে আনা হয়। ভ্যান থেকে নামার পর তার দুই হাত ধরে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। হাজতখানার একটি কক্ষে তাকে রাখা হয়। সেখানে একটি মাদুরে বসে সময় কাটান তিনি। দুপুর ১২টায় তাকে আবার সেই কক্ষে নেওয়া হয়। তখনও মাদুরেই হাঁটু গেঁড়ে বসে ছিলেন। দুপুরের খাবার হিসেবে তার সঙ্গে আনা একটি কলা, পাউরুটি ও দুটি খেজুর খান।
দুপুর ১২টার সময় তার পাশে বসে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী এবং ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালাও। হাজতখানার ভেতর রুটি, কলা ও খেজুর খেতে দেখা যায় তাদেরও। পরে বেলা আড়াইটার দিকে আদালতের কার্যক্রম শেষে তাদের সবাইকে পুনরায় প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়।
তারও আগে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মানিককে কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। তাকে মাথায় হেলমেট ও বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরানো ছিল। দুই হাত পেছনে হাতকড়া পরানো অবস্থায় পুলিশের সহায়তায় তাকে নিচতলা থেকে দোতলায় আদালত কক্ষে নেওয়া হয়। কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পর পুলিশ সদস্যরা তার হেলমেট, জ্যাকেট ও হাতকড়া খুলে ফেলেন। এ সময় তিনি কখনও আদালতের বিচারক, কখনও উপস্থিত আইনজীবীদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
এ সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) তরিকুল ইসলাম আদালতে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়–বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলায় তার বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে এ মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করছি।’
তরিকুল ইসলাম বক্তব্য উপস্থাপনকালে বিচারপতি মানিক কোনও কথা বলেননি। তার পক্ষে সেসময় আদালতে কোনও আইনজীবীও মুখ খোলেননি। পরে আদালত দুদকের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন।
আদালত থেকে বের হওয়ার সময় আবারও তার দুই হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেওয়া হয়। মাথায় পরানো হয় পুলিশের হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। এরপর তাকে আদালতের সামনের বারান্দায় এনে কিছু সময় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তখন তার পেছনে আবদুস সালাম মুর্শেদী ও দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকেও দুই হাত পেছনে হাতকড়া পরানো অবস্থায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
শেষে তিনজনকে আদালত চত্বরে রাখা প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। ভ্যানে তিনজনকে পাশাপাশি লোহার বেঞ্চে বসানো হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে হুইসেল বাজিয়ে প্রিজন ভ্যানটি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশে রওনা হয়।সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইনজীবী মোরশেদ হোসেন বলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মানিক মারাত্মক অর্থসংকটে আছেন। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে। একের পর এক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। মামলার খরচ চালাতে পারছেন না, আইনজীবীর ফিস দিতে পারছেন না। এতটাই সংকটে পড়েছেন যে, ল চেম্বারের সব বই বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন এবং চেম্বারটিও বিক্রি করে দিয়েছেন।’