হাসপাতালের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় চিকিৎসকের রোশানলে বৈষম্য বিরোধী নেতৃবৃন্দ

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে তত্বাবধায়ক ও এক চিকিৎসকের রোশানলে পড়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এমনকি উল্টো তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে হয়রানি করা হচ্ছে বলে দাবি ছাত্র নেতাদের। রবিবার (০৪ মে) বেলা ১১টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবে হাসপাতালের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক সাকির আহমেদ বলেন, জনসাধারণের দীর্ঘদিনের অনিয়ম-দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল হাসপাতালে যায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এসময় তত্বাবধায়ক ডা. মাসুদ পারভেজ হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের বিভিন্ন গাফেলতি ও অনুপস্থিতির বিষয়টি স্বীকার করে সমাধানের আশ্বাস দেন। পরে আমাদের পক্ষ থেকে বায়োমেট্রিক এ্যাটেনডেন্স দেখতে চাইলে এর প্রতিবাদ জানিয়ে অপদস্ত করেন হাসপাতালের অর্থপেডিক সার্জন ডা. ইসমাইল হোসেন। এসময় তিনি ছাত্র প্রতিনিধিদের উপদেষ্টাকে দুর্নীতিবাজ উল্লেখ করে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের চাঁদাবাজ বলে হট্টগোল করেন। পাশাপাশি বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান।
তারা আরও বলেন, এই ঘটনার পর বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আমরা ৮ দফা দাবি জানায়। এরপরই নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে হয়রানি করছেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত। এনিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তারা।
জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রাহিম বলেন, গণঅভ্যুত্থানের কয়েক মাস পার হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে কারো বিরুদ্ধে কোন চাঁদাবাজির অভিযোগ মৌখিক অথবা লিখিতভাবে পায়নি। এরপরেও একটি কুচক্রী মহল নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে ও আমাদেরকে বিতর্কিত করতে এমন মিথ্যা বানোয়াট প্রচারণা করছে। অথচ হাসপাতালে যাওয়ার বিষয়টি সিভিল সার্জন, সেনাবাহিনী, সবাইকে জানিয়ে গেছিলাম।
জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব সাব্বির আহমেদ বলেন, হাসপাতালের সেবা ও চিকিৎসকদের কার্যক্রম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করছেন সেবাগ্রহীতারা। এমনকি হাসপাতালে যাওয়ার আগেই আমরা কয়েকজন ভুক্তভোগীর মাধ্যমে এর প্রমাণও পেয়েছি। এনিয়েই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে গেলে উল্টো আমাদেরকে অপদস্ত ও হেনস্তা করেছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানান, আজকে হাসপাতালের তত্বাবধায়কের নিকট ৮ দফা দাবি লিখিত আকারে জানানো হয়েছে। দাবিগুলো হলো- যথাসময়ে চিকিৎসকদের উপস্থিতি ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় নিশ্চিত করতে হবে, অপ্রয়োজনীয় ও প্রাইভেট রেফার্ড বন্ধ করতে হবে। নিয়মিত রাউন্ড নিশ্চিত ও ওষুধের দালালচক্র দমনের পাশাপাশি শিশু ওয়ার্ডে দক্ষ নার্স নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও দুর্নীতিপরায়ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও গাইনী ওয়ার্ডে সেবাগ্রহীতার থেকে বকশিস গ্রহণ বন্ধের দাবি জানান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রাহিম, সদস্য সচিব সাব্বির আহমেদ, মুখ্য সংগঠক মোত্তাসিন বিশ্বাস, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহির খান, আকিব মিয়াহ অন্যান্যরা।
এবিষয়ে কথা বলতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মাসুদ পারভেজের সাথে যোগাযোগ করা হলে মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি বলে জানান। হাসপাতালের অর্থপেডিক সার্জন ডা. ইসমাইল হোসেন মুঠোফোনে জানান, তারা এসে হাসপাতালের বায়োমেট্রিক হাজিরা দেখতে চাই। অফিসের এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চাইলেই কাউকে দেখানো যায় না। শুধুমাত্র এর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি পূর্বে কিছু নিয়োগ ও হাসপাতালের কার্যক্রমে তাদের পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ না দেয়া ও কিছু নিয়োগ বাতিল করার আবদার পুরন না করায় তারা এমন বক্তব্য দিচ্ছে।