১০:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫

সহিংসতায় খাগড়াছড়ির পাহাড়ে মানবেতর জীবন, ১৪৪ ধারা চলছে

ডেস্ক রিপোর্ট

অপরদিকে সহিংসতায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে জাতিসংঘের মাধ্যমে তদন্তের দাবি জানিয়েছে ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপ। গুইমারার রামেসু বাজার এলাকার মানুষদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। থমথমে পরিস্থিতি কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়িতে অষ্টম শ্রেণির এক মারমা কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে আন্দোলন ও সহিংসতায় জেলার গুইমারায় তিন পাহাড়ি নিহতসহ অন্তত অর্ধশতাধিক পাহাড়ি-বাঙালি আহত হয়। পাশাপাশি ৩০টি দোকান ও বসতবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

সহিংস ঘটনায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ভাঙচুর, দাঙ্গা সৃষ্টি ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে খাগড়াছড়ি সদর থানার এসআই শাহরিয়ার বাদী হয়ে ৬–৭ শত অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। অপরদিকে গুইমারা থানায় হত্যাকাণ্ড ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে অজ্ঞাত ২৫০–৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন।
 

গুইমারার ঘটনায় তিনজন নিহত, অর্ধশতাধিক আহত এবং ৩৫টি বসতবাড়ি ও ৫৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে একজন মেজরসহ সেনাবাহিনীর ১৬ সদস্য, ওসিসহ ছয় পুলিশ সদস্য এবং একজন সাংবাদিক আহত হন। সহিংসতায় সেনাবাহিনীর গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্সে হামলা হয়েছে। জেলা সদরের মহাজনপাড়ায় প্রকাশ্যে গুলি বর্ষণের ঘটনাও ঘটে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে ক্ষতিগ্রস্তরা বিভিন্ন অভিযোগ প্রশাসনের কাছে তুলে ধরেন। জানা যায়, যাদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে ৮০ জনকে মাত্র ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। নিহত তিনজনের পরিবারকে জেলা প্রশাসন ও পার্বত্য জেলা পরিষদ সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়েছে। তবে দিন যতই যাচ্ছে সহিংসতার ভয়াবহ চিত্র ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। লুটপাটের শিকার ব্যবসায়ী ও পরিবারগুলো এখন প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
 

জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, খাগড়াছড়ি ও গুইমারার সহিংস ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অবরোধকারীদের সঙ্গে একবার আলোচনা হয়েছে। তাদের আট দফা দাবির মধ্যে সাতটি আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। আমরা চাই বিষয়টির সমাধান আলোচনার টেবিলেই হোক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হবে। নিহত ও আহতদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে।’

অন্যদিকে খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. হাসান মাহমুদ বলেন, জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছেন। পরিস্থিতি অনুযায়ী ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের বিষয়টি প্রশাসন দেখবে। তিনি আরও জানান, সাজেকসহ সব পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে, পর্যটকরা নিরাপদে ঘুরতে আসতে পারবেন।
 
উল্লেখ্য, গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়িতে এক মারমা স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে আহুত অবরোধকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এতে তিনজন নিহত, শতাধিক লোক আহত এবং বহু বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

আপডেট: ০৯:৫৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫

সহিংসতায় খাগড়াছড়ির পাহাড়ে মানবেতর জীবন, ১৪৪ ধারা চলছে

আপডেট: ০৯:৫৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫

অপরদিকে সহিংসতায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে জাতিসংঘের মাধ্যমে তদন্তের দাবি জানিয়েছে ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপ। গুইমারার রামেসু বাজার এলাকার মানুষদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। থমথমে পরিস্থিতি কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়িতে অষ্টম শ্রেণির এক মারমা কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে আন্দোলন ও সহিংসতায় জেলার গুইমারায় তিন পাহাড়ি নিহতসহ অন্তত অর্ধশতাধিক পাহাড়ি-বাঙালি আহত হয়। পাশাপাশি ৩০টি দোকান ও বসতবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

সহিংস ঘটনায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ভাঙচুর, দাঙ্গা সৃষ্টি ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে খাগড়াছড়ি সদর থানার এসআই শাহরিয়ার বাদী হয়ে ৬–৭ শত অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। অপরদিকে গুইমারা থানায় হত্যাকাণ্ড ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে অজ্ঞাত ২৫০–৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন।
 

গুইমারার ঘটনায় তিনজন নিহত, অর্ধশতাধিক আহত এবং ৩৫টি বসতবাড়ি ও ৫৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে একজন মেজরসহ সেনাবাহিনীর ১৬ সদস্য, ওসিসহ ছয় পুলিশ সদস্য এবং একজন সাংবাদিক আহত হন। সহিংসতায় সেনাবাহিনীর গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্সে হামলা হয়েছে। জেলা সদরের মহাজনপাড়ায় প্রকাশ্যে গুলি বর্ষণের ঘটনাও ঘটে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে ক্ষতিগ্রস্তরা বিভিন্ন অভিযোগ প্রশাসনের কাছে তুলে ধরেন। জানা যায়, যাদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে ৮০ জনকে মাত্র ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। নিহত তিনজনের পরিবারকে জেলা প্রশাসন ও পার্বত্য জেলা পরিষদ সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়েছে। তবে দিন যতই যাচ্ছে সহিংসতার ভয়াবহ চিত্র ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। লুটপাটের শিকার ব্যবসায়ী ও পরিবারগুলো এখন প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
 

জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, খাগড়াছড়ি ও গুইমারার সহিংস ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অবরোধকারীদের সঙ্গে একবার আলোচনা হয়েছে। তাদের আট দফা দাবির মধ্যে সাতটি আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। আমরা চাই বিষয়টির সমাধান আলোচনার টেবিলেই হোক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হবে। নিহত ও আহতদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে।’

অন্যদিকে খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. হাসান মাহমুদ বলেন, জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছেন। পরিস্থিতি অনুযায়ী ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের বিষয়টি প্রশাসন দেখবে। তিনি আরও জানান, সাজেকসহ সব পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে, পর্যটকরা নিরাপদে ঘুরতে আসতে পারবেন।
 
উল্লেখ্য, গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়িতে এক মারমা স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে আহুত অবরোধকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এতে তিনজন নিহত, শতাধিক লোক আহত এবং বহু বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।