আজ প্রায় ১১মাস থেকে আমার বুকের ধন আব্দুর রহমানকে দেখিনি। জানিনা কখনো দেখতে পাবো কি না? বেঁচে আছে কি মারা গেছে তাও জানতে পারি না। আমি আমার মানিককে ফিরে পেতে চাই। আমি প্রশাসনের দুটি পা ধরে আকুতি জানাছি, তারা যেন সর্বাত্মক চেষ্টা করে আমার সন্তানকে উদ্ধার করে দেয়। কথা গুলো বললেন চঁাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌর এলাকার দেবীনগর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী ডলিয়ারা বেগম।
তিনি আরো জানান, গত ১৫ ফেব্রুয়ারী ও ২২ এপ্রিল আমি শিবগঞ্জ থানায় অভিযোগ করে কোন ফলাফল পাইনি। এমনকি কোর্টে একটি মামলা করেছি। সেটির কোন তদন্তও হয়নি।
সরজমিনে গিয়ে ডলিয়ারারা বেগমের পারিবারিক, এলাকাবাসী, ও ডলিয়ারা বেগমের স্বাক্ষরিত শিবগঞ্জ থানায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারী ও ২২ এপ্রিল এবং চঁাপাইনবাবগঞ্জ আদালতের মামলা নং ১০৮২ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১০ জুলাই একই এলাকার কুরবান আলি, আকাশ আলি ও তোতা সহ আরো কয়েকজন মিলে জাহাঙ্গীর হোসেন ও ডলিয়ারা বেগমের ছেলে আব্দুর রহমান(১৮) কে রাজমিস্ত্রির কাজে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে আব্দুর রহমানের খেঁাজ পাওয়া যায়নি।
অভিযোগকারী ডলিয়ারা বেগম জানান, যখনই তাদের কাছে আমরা সন্তানের খোঁজ খবর নিতে যাই, তখনই তারা টাকা চাই। কখনো ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা, কখনো আড়াই লাখ টাকা আবার কখনো ৬০ হাজার টাকা চান। টাকা দিলেই তার ছেলেকে এনে দিবে বলে দাবী ডলিয়ারা বেগমের। তবে, তিনি প্রমাণ স্বরূপ কল রেকর্ডও দেন গণমাধ্যমের কাছে। এমনকি টাকা না দিলে আমাকে ও পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকীও দেয়।
তিনি আরো বলেন, আমার বিশ্বাস তারা আমার ছেলেকে গুম করে রেখেছে এবং টাকা দিলেই ফেরত দিবে। কিন্তু আমার স্বামী দিন আনে দিন খাই। কোথায় এত টাকা পাবো?
এলাকার খতিজা বেগম, ফিতন বেগম, হারুন-অর রশিদ সহ অনেকেই জানান, তারা আব্দুর রহমানকে রাজমিস্ত্রির কাজ দেয়ার নাম করে নিয়ে গেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত আব্দুর রহমান ফিরে আসেনি। এমনকি কোন যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তবে আব্দুর রহমানে সাথে থাকা একই গ্রামের বাদশাহ ও শামীম জানালেন আমরা চোরাইপথে এক সংগে প্রায় ১৬/১৭জন ভারতে গিয়েছিলাম রাজমিস্ত্রির কাজে।
বাংলাদেশের আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরই পরই চোরাই পথে যাওয়া কাউকে একসাথে থাকতে না দেয়ায় বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার সময় ভারতের পুলিশের হাতে পাঁচ জন ধরা পড়ি। আমরা বিভিন্ন কায়দা কৌশল করে চার জন, জন প্রতি ভারতীর ৪০ হাজার রুপী খরচ করে জামিনে কোন রকমে বাড়ি এসেছি। কেউ কেউ এখনো ভারতে চোরাই ভাবে রাজ মিস্ত্রির কাজ করছে।
তবে, কুরবান আলীর পিতা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে কুরবার আলী ও আকাশ আলী সাথে আব্দুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন কাজে গিয়েছিল। কিন্তু তারা যে ভারতে কাজে যাবে তা আমাদের জানাইনি। তবে, পরে আমার ছেলে ফোনে জানায় তারা ভারতে চোরাই পথে গিয়েছে। এসময় আব্দুর রহমান সহ ৫জন ভারতীয় পুলিশের হাতে আটক হয়। আব্দুর রহমানের জামিনে আনার জন্য টাকা চেয়েছিলাম এবং জামিনের জন্য ভারতীয় আদালতে আবেদনও করা হয়েছে।
এব্যাপারে ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা শিবগঞ্জ থানার এস.আই রেজাউল হক জানান, গত ২২ এপ্রিল অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারি যে, আদালতে মামলা হয়েছে। এমতাবস্থায় আদালতের নির্দেশ ছাড়া আমরা তদন্ত করতে পারি না। তাই ফিরে এসেছি।
শিবগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) এসএম শাকিল হাসান জানান, আমার জানা মতে এ ঘটনাটির ব্যাপারে আদালতে মামলা হয়েছে এবং ডিবির তত্ত্বাবধানে আছে। তবে ঘটনাটি খুব দু:খজনক।