ভাড়া ভবনে নিরাপত্তাহীনতা এবং জনবল সংকট নিয়েই চলছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বেলতলী নৌ পুলিশ ফাঁড়ি। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় বেলতলী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির থাকার কথা উপজেলার সাদুল্ল্যাপুর ইউনিয়নের বেলতলী অঞ্চলে কিন্তু নিজস্ব কোন ভবন না থাকায় নৌ পুলিশ ফাঁড়িটির কার্যক্রম পরিচালনা করছে ষাটনল ইউনিয়নের কালীপুর বাজারে ঝুঁকিপূর্ণ একটি মার্কেটের দোতালায়। এখানে ২০১৯ সালে নৌ পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপিত হওয়ার পর প্রায় ছয় বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত সংস্থাটির নিজস্ব ঠিকানা হয়নি। প্রায় ছয় বছর ধরে ফাঁড়ির কার্যক্রম চলছে একটি পুরনো ভাড়া মার্কেটে। সেখানে নেই কোন নিরাপত্তা, নেই আসামী রাখার হাজতখানা। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই কার্য পরিচালনা করছেন নৌ পুলিশ ফাঁড়িটির কার্যক্রম।পর্যাপ্ত জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে প্রত্যাশিত সেবা দিতে পারছেন না ফাঁড়ির নৌ পুলিশের সদস্যরা। নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্পিডবোট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। নৌপথের বিশাল এলাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে জনবল সংকটেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সংস্থাটিকে।
বেলতলী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির আওতাধীন নদীগুলো হলো– মেঘনা নদীর ষাটনল লঞ্চ ঘাট থেকে মুন্সিগঞ্জের সদর উপজেলা, গজারিয়া উপজেলা, দাউদকান্দি উপজেলায় সীমানা পর্যন্ত এবং মতলব উত্তর উপজেলার ধনাগোদা নদীর শ্রী রায়ের চর বাংলাবাজার থেকে কালীরবাজার, খাগুরিয়া, হাফানীয়া, বেলতলী, কালীপুর, লালপুর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার নৌপথের এই বিশাল এলাকা। বর্তমানে বেলতলী নৌপুলিশের দায়িত্বে রয়েছেন একজন পুলিশ পরিদর্শক, একজন উপপরিদর্শক, দু’জন সহকারী উপপরিদর্শকসহ ৫ জন সদস্য। এ জনবল নিয়েই নিয়মিত নৌপথে টহলের কাজ চলছে। নৌ পুলিশের সরকারি কোনো স্পিডবোট না থাকায় নদীতে অপরাধ দমন বেশ চ্যালেঞ্জিং। বর্তমানে ইঞ্জিনচালিত একটি সেলো নৌকা নিয়ে নদীপথে টহলের কাজ চালানো হচ্ছে। নদীপথে অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধে নৌ পুলিশের অভিযানে গত ২ মাসে ৪টি টি মামলা ও ১৮জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এখান থেকে নিয়মিতই কয়েক প্রকারের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাল্কহেড, কার্গো ও জাহাজ দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলন থেকে মালামাল সরবরাহ করে থাকেন। সাম্প্রতি সময়ে বেলতলী অঞ্চলের মেঘনা নদীর মতলব-গজারীয়ার নৌ সীমানার তীরবর্তী অঞ্চলে অবৈধভাবে বাল উত্তোলন কে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বাবলা খালাসি নামে একজন নৌ ডাকাত নিহত হয়েছে।এই অঞ্চলে চাঁদপুর নৌ পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় নৌপুলিশের তৎপরতায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে নৌপথে চলাচলকারী নৌযান পরিচালনাকারীরা বলছেন, এখনও নানা কৌশলে নদীতে চাঁদাবাজি চলছে ও রাতের আঁধারে অবৈধভাবে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। নৌপুলিশের সীমাবদ্ধতা দূর হলে এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
নৌ পুলিশ ফাঁড়ির স্থায়ী কার্যালয় তৈরির লক্ষ্যে বেলতলী লঞ্চ ঘাটের দক্ষিণ দিকে মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের বাহিরে বদরপুর মৌজার বিএস দাগ নং ২০৭৬ এবং ২০৭৭ দাগে ৩৩ শতক জমি কেনা হয়েছে। সেখানে নৌপুলিশের একটি সাইনবোর্ড টানানো হয়। তবে স্থাপনা নির্মাণের কাজ ওই সাইনবোর্ডেই থমকে আছে।
কালীপুর বাজারের ব্যাবসায়ী মো. দীল মিয়া দলু জানান, এখানে স্বল্প জনবল দিয়ে নৌপুলিশ ফাঁড়ির সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা নৌপথে নিরাপত্তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। তবে নদীতে চাঁদাবাজি নির্মূল করতে ফাঁড়িতে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের পাশাপাশি আধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ অত্যন্ত জরুরি।
বেলতলী নৌ পুলিশের ইনচার্জ মো. সফিকুল ইসলাম জানান, স্বল্প জনবল দিয়ে নিয়মিত নদীতে টহলের কাজ অব্যাহত রেখেছেন তারা। এখানে নৌপথের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে স্পিডবোট একান্ত প্রয়োজন। তাদের অভিযানের কারণেই মূলত নৌপথে অবৈধ বালু উত্তোলন ও চাঁদাবাজি কমেছে।
চাঁদপুরের নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, আবাসন সমস্যার কারণে জনবল বাড়ানো যাচ্ছে না। নৌপথে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দ্রুত একটি স্পিডবোট দেওয়ার বিষয়টি সদরদপ্তরে জানানো হয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্ল্যাপুর ইউনিয়নের বেলতলী বাজারে একটি ভাড়া বাড়িতে মাত্র ৪ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে বেলতলী নৌ পুলিশ ফাঁড়ি।
পরবর্তীতে ঐ বছেরই ভবন সংকটের কারণে ফাঁড়ির কার্যক্রম নিয়ে আসা হয় ষাটনল ইউনিয়নের কালীপুর বাজারে একটি মার্কেটের দোতালায়। এখানেই প্রায় ৬ বছর ধরে চলছে নৌ পুলিশের কার্যক্রম।