চাঁদপুরের মতলব উত্তরে বিভিন্ন সামাজিক বিষয় নিয়া বিরোধের জেড় ধরে শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন রোমা আক্তার (৩০) নামের অন্তঃসত্ত্বা এক নারী। মারাত্মক আাহত রোমা আক্তারকে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নতর চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত ডাক্তার ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে রেফার করেন। গত রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার সময় উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনায় আ. জলিল দেওয়ান বাদী হয়ে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ছয় জনকে বিবাদী করে মতলব উত্তর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিবাদীরা হলেন, মো. আমান উল্ল্যাহ সরকার (৫০), মো. নাজির আহম্মেদ সরকার (৬৮) উভয় পিতা বারেক সরকার, রানু বেগম (৪০), স্বামী মো. আমান উল্ল্যাহ সরকার, মিলি বেগম (৩৮), স্বামী মো. কালা মিয়া সরকার, সর্ব সাং নয়াকান্দি, বোরচর। লিটন কসাই (৪২), পিতা ফিরোজ কসাই, সাং আব্দুল্লাহপুর, উজ্জল ছৈয়াল (৪১), পিতা আ. মজিদ ছৈয়াল সাং গুয়াগাছিয়া, গজারিয়া মুন্সিগঞ্জ।
অভিযোগ সূত্রে বাদী জানান, বর্ণিত বিবাদীরা আমাদের একই গ্রামের পার্শ্ববর্তী বাড়ীর লোক। বিবাদীরা দুষ্ট, দুচ্চরিত্রের, দাঙ্গাবাজ এবং লাঠিয়াল প্রকৃতির লোক। বিবাদীদের সাথে আমার ও আমার পরিবারের লোকজনদের এলাকার বিভিন্ন সামাজিক বিষয় নিয়া পূর্ব হইতে বিরোধ চলামান।
উক্ত বিরোধের কারনে বিবাদীরা দীর্ঘদিন যাবত আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনদেরকে বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার নির্যাতন করিয়া আসছে। বিবাদীদের অত্যাচার নির্যাতনে প্রতিবাদ করিলে, লাঠি সোটা দা ছেনা নিয়া মারধর করে। ইতিপূর্বে বহুবার আমাদেরকে মারধর করিয়া রক্তাক্ত জখম করে।
বিবাদীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় ভাবে বহুবার সালিশ বৈঠক হইলেও বিবাদীরা কাহারো কোন কথার তোয়াক্কা না করিয়া আমাদেরকে অত্যাচার নির্যাতন করিতে থাকার একপর্যায় ঘটনার তারিখ ও সময় পূর্ব বিরোধের জের ধরিয়া বর্ণিত বিবাদীরা সহ অজ্ঞাতনামা বিবাদীরা হাতে লাঠি সোটা, লোহার রড, ধারালো লোহার ছেনা ইত্যাদি দেশিয় অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হইয়া বে-আইনী জনতাবন্ধে ঘটনাস্থল আমার বসত বাড়ীর আঙ্গীনায় অনধিকার প্রবেশ করিয়া আমাদের পরিবারের লোকজনদেরকে অকথ্য ভাষায় গাল মন্দ করে। আমার স্ত্রী বসত ঘর হইতে বের হইয়া বিবাদীদের গালমন্দের বিষয়ে প্রতিবাদ করিলে, সকল বিবাদীরা আমার স্ত্রীর প্রতি ক্ষিপ্ত হইয়া অতর্কিত আক্রমন করে। একপর্যায় ১নং বিবাদী উত্তেজিত হইয়া তাহার হাতে থাকা লোহার দাড়ালো ছেনাদ্বারা আমার স্ত্রী ১নং সাক্ষীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথা লক্ষ করিয়া কোপ মারিলে আমার স্ত্রী বাম হাতদ্বারা প্রতিহত করার চেষ্টা করিলে, উক্ত কোপ আমার স্ত্রীর বাম হাতের বাহুতে পরিয়া গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখমপ্রাপ্ত হয়। আমার স্ত্রী আঘাতের ফলে সাথে সাথে মাটিতে লুঠিয়ে পরিয়া গেলে ২নং বিবাদী লোহার রডদ্বারা হত্যার উদ্দেশ্য বারি মারিয়া ১নং সাক্ষীর ডান হাতের বাহুতে গুরুতর হাড় ভাঙ্গা জখম করে। আমার স্ত্রীর ডাক চিৎকার শুনিয়া আমার বাড়ীর পার্শ্ববর্তী বাড়ী হইতে আমার শ্যালিকা ২নং সাক্ষী এবং আমার শাশুরী ৩নং সাক্ষী ঘটনাস্থলে আগাইয়া আসিয়া বিবাদীদের কবল হইতে আমার স্ত্রীকে রক্ষা করার চেষ্টা করিলে, ২.৩নং এবং ৪নং বিবাদীরা আমার শ্যালিকা ২নং সাক্ষী ৪ মাসের অন্তসত্বাবস্থাকে মারধর করিয়া তলপেটে মারাত্বক জখম সহ শরীরের বিভিন্নস্থানে নিলাফুলা জখম করে। ৩নং বিবাদী তাহার হাতে থাকা লোহার ধারালো দাও দ্বারা হত্যার উদ্দেশ্যে কোপ মারিয়া ৩নং সাক্ষীর বাম হাতের বাহুতে গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম করে। ৩নং সাক্ষী মাটিতে পরিয়া গেলে, ৫নং এবং ৬নং বিবাদীরা সহ অজ্ঞাতনামা বিবাদীরা লাঠি সোটা রডয়ারা এলোপাথারী ভাবে মারধর করিয়া শরীরের বিভিন্নস্থানে জখম করে। ৪নং বিবাদী আমার স্ত্রী ১নং সাক্ষীর গলায় থাকা আট আনা ওজনের স্বর্ণের ১টি চেইন মূল্য ষাট হাজার টাকা জোরপূর্বক ছিনাইয়া নিয়া যায়। ৫নং এবং ৬নং বিবাদীদ্বয় আমার স্ত্রীর চুলের মুঠি ও পরিহিত কাপড় ধরিয়া টানা হেছড়া করিয়া পরিহিত কাপড় ছিড়িয়া শ্লীতাহানী করে। ৪নং বিবাদী ৩নং সাক্ষীর গলায় থাকা ৬ আনা ওজনের স্বর্ণের ১টি চেইন মূল্য চল্লিশ হাজার টাকা ছিনাইয়া নিয়া যায়। ২নং বিবাদী তাহার দুই হাতদ্বারা ২নং সাক্ষীকে শ্বাসরুদ্ধ করিয়া হত্যার চেষ্টায় গলায় চাঁপ দিয়া ধরে। জখমীদের শোর চিৎকার শুনিয়া আমি সহ বর্নিত অপরাপর সাক্ষীগন এবং অন্যান্য লোকজন ঘটনাস্থলে আসিয়া জখমীদেরকে বিবাদীদের কবল হইতে প্রানে রক্ষা করি।
সকল বিবাদীরা সহ অজ্ঞাতনামা বিবাদীরা আমাদেরকে প্রকাশ্য হুমকি দিয়া বলে যে, এই ঘটনার বিষয়ে কোন সালিশ বৈঠক ডাকি বা কোন আইনীনের আশ্রয় নিই, পরবর্তী যে কোন সময় আমাদের বাড়ী ঘর জ্বালাইয়া পুরাইয়া ক্ষতি সাধণ সহ আমাকে ও আমার স্ত্রী সন্তানদেরকে সময় সূযোগমত খুন করিয়া লাশ গুম করিবে বলিয়া প্রকাশ্য হুমকি দিয়া ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। আমি স্থানীয় লোকজনদের সহায়তায় জখমী ১,২ এবং ৩নং সাক্ষীদেরকে গুরুতর আহত অবস্থায় মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে জখমীদের অবস্থা আশংকা জনক বিধায় উন্নতর চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত ডাক্তার ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে রেফার করেন। জখমীরা উক্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
মতলব উত্তর থানার ওসি (তদন্ত) ছানোয়ার হোসেন জানান, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত স্বপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।