পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সরকারি পর্যায়ে নীরব থাকার সময় শেষ হয়ে গেছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ভারত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানাতে হবে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘একটি কথা মাথায় রাখতে হবে নদীর পানি কেবলমাত্র রাজনীতি না, এটি কূটনীতি, অর্থনীতিও। এ জন্য আমাদের মানুষের কথা, দুর্ভোগ ও প্রত্যাশা বুঝতে উজানের দেশের সঙ্গে কথা বলতেই এখানে আসা।’
রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফেনীর পরশুরামের নিজ কালিকাপুর এলাকায় বন্যায় ভাঙন কবলিত বল্লামুখা বাঁধ পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘উজানের দেশ ভারতের সঙ্গে শুধুমাত্র একটি নদী কেন্দ্রিক সমস্যা এমন নয়, প্রায় সবগুলো নদী নিয়েই সমস্যা। আমাদের ৫৪ বা ৫৭টি অভিন্ন নদী রয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারিনি। তিস্তা নিয়েও তা পারিনি। বন্যায় অভ্যস্ত না হওয়ার কারণে আপনাদের কাছে এটি অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। কিন্তু তিস্তা পাড়ের মানুষের এমন বন্যায় প্রতিবছর দুঃখ করতে হয়।’
আন্তর্জাতিক আইনে বাংলাদেশ ও ভারতের স্বাক্ষর করার সুফল তুলে ধরে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা যদি স্বাক্ষর করি, তাহলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কথা বলা অনেক বেশি সহজ হবে। এ বিষয়ে সরকারের সব মহল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। ভবিষ্যতে চুক্তির বিষয়ে দুই দেশকে স্বাক্ষর করতে হবে।’
পানিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ‘তিস্তা চুক্তির খসড়া হওয়ার পরেও তারা (ভারত) স্বাক্ষর করেনি। তিস্তা নদী নিয়ে কী হচ্ছে সেই বিষয়ে এত দিন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জানত না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি বন্যায় যে আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারতাম, ২৯ জন মানুষের প্রাণহানি কমাতে পারতাম সেসব বিষয় উজানের দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলতে হবে।’
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সরকারের চশমা দিয়ে নয়, জনগণের চশমা দিয়ে সমস্যাগুলো দেখার জন্যই এখানে এসেছি। স্থানীয়রা এই বিষয়ে কেমন সমাধান চায়, সে কথা শুনে সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রতিবেশী দেশ থেকে একটি বাঁধ কেটে দেওয়ার কারণে ক্ষতি বেশি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ প্রায় শেষপর্যায়ে।’
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এখন যৌথ নদী কমিশন ও নীতিনির্ধারণী মহলের সঙ্গে বসে ক্ষতির কথা তুলে ধরব। সরকারি পর্যায়ে নীরব থাকার সময় শেষ হয়ে গেছে। সরকারি পর্যায়েও যদি নীরবতা বা নিষ্ক্রিয়তা থাকে, সেসব দিনও শেষ হয়ে গেছে।’
বন্যায় ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন শেষে আজ দুপুরে জেলার সোনাগাজী মুহুরী রেগুলেটর পরিদর্শন ও বিকেলে ফেনী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সাম্প্রতিক বন্যায় ভাঙন ও করণীয় বিষয়ে আয়োজিত গণশুনানিতে অংশ নেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
এ সময় পানি সম্পদ সচিব নাজমুল আহসান, ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার, পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান, বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা হাবিব শাপলা, পরশুরাম উপজেলা সহকারি কমিশনার মো. মাহফুজুর রহমান, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল হাকিমসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।