বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কামারহাট এলাকায় এতিমের বাড়িঘর ও পৈত্রিক জমি দখলের চেষ্টা ও প্রান নাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চাচা ও ফুপুদের বিরুদ্ধে।
বরগুনা শহরের গ্রীনরোড এলাকায় তানজিদার পৈত্রিক জমি দখল করে দেয়াল ও ঘর তুলে এবং কামারহাট বাজারের একটি দোকান ঘর, জমি-জমা ও বিল্ডিং দখল করে নেয় তার চাচা ও ফুপুরা।তারা শুধু বাড়িঘর ও জমি দখলের চেষ্টা করে ক্ষান্ত হয়নি। এতিম তানজিদা ও তার স্বামী মনিরুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় ও বরগুনা আদালতে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে মামলা দায়ের করেছে মিতা রানী শিল্পী। এ মামলায় মনিরুল ও তানজিদার প্রতিবেশী মিঠু অনেকদিন জেল খেটেছে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, বরগুনা শহরের গ্রীনরোড এলাকায় তানজিদার পৈত্রিক জমির চলাচলের পথ আটকে মিতা রানী শিল্পী দেয়াল ও ঘর নির্মাণ শুরু করলে তানজিদা বাধা দেওয়ায় শিল্পী ও অন্যান্য বোনরা তানজিদা ও তার মেয়েকে মারধর শুরু করে। এক পর্যায় মিতা রানী শিল্পীর হাতে থাকা লোহার রড দিয়া তানজিদার মেয়েকে খুনের উদ্দেশ্যে পিটান দিলে উক্ত পিটান তানজিদার মেয়ের বাম হাতে পরিয়া গুরুতর হাড় ভাঙ্গা জখম করে। এ ঘটনায় তানজিদা বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্¦য়ক ছাত্রদের জানাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সমন্বয়ক ও স্থানীয় কমিশনারকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শ করে একটি আদেশ দেয়। মিতা রানী শিল্পী উক্ত আদেশ অমান্য করে পূনরায় দেয়াল ও ঘর নির্মান করে।
এরপর ২৪ আগস্ট চাচা মিজানুর রহমান ও চাচি খাদিজা আক্তার হেপীর প্রভাব খাটিয়ে তানজিদার নিজ জমির চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে শিল্পী ঘর তৈরী করতে গেলে তানজিদা বাধা প্রদান করলে চাচা ও চাচির প্রভাব খাটিয়ে ফুপু মিতা রানী @ শিল্পী বাদী হয়ে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে জি,আর ২৪১/২৪ (বর) ও ২২৮/২৪ (বর) মামলা দায়ের করে। ইতোপূর্বে মিজানুর রহমান ও খাদিজা আক্তার হেপীর প্রভাব খাটিয়ে মিতা রানী শিল্পী তার বোনদের নিয়ে অন্যান্য ওয়ারিশদের ও এলাকার নিরীহ ব্যক্তিদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়া হয়রানী করে। তানজিদা ও তার স্বামী মনিরুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে শিল্পী বরগুনা থানা সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়ে হয়রানী করতে থাকে। নিজ চাচা ও ফুপুদের আক্রমনে প্রতি ঘন্টায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় সময় পার করছে বলে মনের কষ্ট নিয়ে অভিযোগ করেণ তানজিদা।
এ ঘটনায় তানজিদা বরগুনা থানায় গিয়ে ঘটনার বিষয় জানিয়ে মামলা করতে চাইলে থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব চাচা মিজানর রহমান ও এনএসআই এর জয়েন্ট ডিরেক্টর চাচি খাদিজা আক্তার হেপীর সহায়তায় মিতা রানী শিল্পীর দায়েরকৃত মামলায় মনিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায়।
একের পর এক হয়রানী মুলক মিথ্যা মামলা ও প্রতিনিয়ত জীবন নাশের হুমকির শিকার হয়ে এতিম তানজিদা আক্তার, তার ১২ বছরের ভাই তহিদ রহমান সানিম ও তার বিধবা মা এখন দিশাহারা হয়ে পড়েছে।
মনিরুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর তানজিদা ও সানিম প্লাকার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে বরগুনা প্রেসক্লাব চত্তরে ও ডিসি অফিসের সামনে মানবন্ধন করে। অবশেষে বিষয়টি সঠিক তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া এবং হয়রানীর হাত থেকে বাঁচতে বরগুনার জেলা প্রশাসক বরাবরে ভুক্তভোগী তানজিদা আক্তার একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।
শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর মিতা রানী শিল্পী তার বড় ভাই মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী খাদিজা আক্তার হেপী এর ক্ষমতা বলে শিল্পী তার পাঁচ বোন ও সন্ত্রাসী দলবল নিয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ কামারহাট গ্রামের মৃত তানভীর রহমান খোকন এর মেয়ে তানজিদার পৈত্রিক জমিতে থাকা দোকানপাট ভাংচুর করে লোপাট করে ও দখল করে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার ৭নং কাঠালতলী ইউনিয়নের কামারহাট বাজারে মৃত: তানভীর রহমান খোকন এর মেয়ে তানজিদার ওয়ারিশি জমি নিয়া তার ফুপুরা ঝামেলা সৃষ্টি করলে চাচা মিজানুর রহমান কামারহাট বাজারের জমি ভাগ ভাটোয়ারা করে সীমানা নির্ধারন করে দেয়। উক্ত জমিতে তানজিদা একটি দোকান ঘর তৈরি করে ভাড়া দেয়। ঐ দোকানঘর শিল্পী সহ তার সন্ত্রাসী দলবল নিয়া ভাংচুর করে জমি ও দোকান দখল করে।
কামারহাট বাজারের পাহারাদার শহিদুল বলেন, শিল্পী আমাকে তানজিদাদের দোকানঘরের কাছে যাইতে দেয় নাই। শিল্পী তার সন্ত্রাসী দলবল নিয়া দোকান ঘর লোপাট করে ও দোকান দখল করে। শিল্পী আমাকে বলে আপনি ঐদিকে দেখেন আমি এই দিকে দেখছি। শিল্পী ও তার সন্ত্রাসী দলবলের সামনে আমি যেতে সাহস পাই নাই।
তানজিদা আক্তার বলেন, আমার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে চাচা মিজানুর রহমান ও ফুপুরা সব সময় তাদের ক্ষতি করার সুযোগ খুজতে থাকে। চাচা ও ফুপুদের কাছে আমি পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ চাইলে তারা সম্পত্তি বুঝাইয়া না দিয়া খুন জখম ও মিথ্যা মামলার হুমকি দেয়। ২০১৪ সালে চাচা মিজানুর রহমান ও ফুপু মিতা রানী শিল্পীসহ অন্যান্য ফুপুরা আমার বাবাকে দিনের পর দিন শারীরিক ও মানুষিক ভাবে অত্যাচার ও চাপ প্রয়োগ করে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে। এরপর তারা এটাকে আত্মহত্যা বলে ঢালাও ভাবে প্রচার করে তার সম্পত্তি ও বিল্ডিং সহ বসত বাড়ী দখল করে নিয়ে এত বছর পর্যন্ত নিজেদের স্বার্থ-সিদ্ধি করে যাচ্ছে। চাচা মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী খাদিজা আক্তার হ্যাপি দিনের পর দিন ক্ষমতার অপব্যবহার করে মিতা রানী শিল্পীর সহযোগীতায় আমার বাবার পৈত্রিক ও কবলাকৃত জমি জবরদখল করে আছে। আমাদের কোন আয়ের উৎস না থাকায় পৈত্রিক জমি বুঝাইয়া দেওয়ার জন্য বললে ফুপু ও চাচা মিজানুর রহমান কোন কর্নপাত না করে আমার ও আমার মা এবং আমার স্বামী মনিরুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির করতে থাকে।
এ ব্যাপারে তানজিদার চাচা মিজানুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বোন মিতা রানি শিল্পীর সাথে আমার ভাইজি তানজিদার সাথে জমির ভাগ বন্টন নিয়ে বিরোধ আছে। আমার সাথে তানজিদার কোন বিরোধ নেই। আমি পারিবারিক সমস্যা নিরসন করে শান্তি স্থাপন করতে চাই।
উল্লেখ্য তানজিদার বাবা মারা যাওয়ার পর দাদী রোকেয়া বেগম ফিরোজা ১৪ মার্চ ২০২২ সালে পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে তার ছেলে মৃত: তানভীর রহমান খোকন এর অপমৃত্যুর ঘটনায় সংবাদ সম্মেল করে বলেন, আমি একজন মা। আমার গর্ভজাত সন্তানের দ্বারা আমি নির্যাতিত। কাউকে বলতে পারছিনা। ওই সচিব ছেলের নির্যাতনের কষ্টে এবং মেয়েদের নির্যাতনে আমার বড় ছেলে তানভীর রহমান খোকন বিষপানে আত্মহত্যা করে।